শ্যামাসুন্দরীর দূষণ ছড়াচ্ছে নদীতেও হুমকিতে জীববৈচিত্র
খাল দখল হচ্ছে, দূষণ হচ্ছে কিন্তু প্রশাসনের কোন মাথা ব্যাথা নেই
নিউজডোর ডেস্ক ♦ থমকে আছে রংপুর নগরীর বুক চিরে বয়ে যাওয়া ঐতিহ্যবাহী শ্যামাসুন্দরী খালের উন্নয়ন। করোনাকালের আগে বিভাগীয় প্রশাসন, সিটি কর্পোরেশন, পানি উন্নয়ন বোর্ড উদ্যোগী হয়ে দখলদার উচ্ছেদ ও সীমানা নির্ধারণ করলেও গেল দু’বছরে দৃশ্যমান কোন উন্নয়ন হয়নি। ফলে দুষণের পাশাপাশি শ্যামাসুন্দরী খালে আবারও দখল চেষ্টা শুরু হয়েছে জানিয়েছেন সচেতনরা।
এদিকে রংপুর সিটি কর্পোরেশন বলছে শ্যামাসুন্দরীর খালের ঐতিহ্য ফিরিয়ে আনতে নিয়োগ করা হয়েছে পরামর্শক। দীর্ঘমেয়াদী পরিকল্পনার কথা মাথায় রেখেই পরামর্শ প্রতিষ্ঠান কাজ শুরু করেছে।
রংপুর জেলা প্রশাসন সূত্রে জানা যায়, রংপুর নগরীর বুক চিরে বয়ে যাওয়া প্রায় ১৩০ বছর পুরনো ঐতিহ্যবাহী শ্যামাসুন্দরী খাল। ১৮৯০ সালে তৎকালীন পৌরসভার চেয়ারম্যান ও ডিমলার রাজা জানকি বল্লভ সেন তাঁর মা শ্যামাসুন্দরী’র স্মরণে এ খাল খনন করেছিলেন। খালটি রংপুর সিটি কর্পোরেশন এলাকার মধ্যে ১৫ দশমিক ৮০ কিলোমিটার জুড়ে বিস্তৃত।
২০১৯ সালের ২৬ আগস্ট শ্যামাসুন্দরী খালের পুরনো ঐতিহ্য ফিরিয়ে আনতে জেলাপ্রশাসকের কার্যালয়ে জনপ্রতিনিধি, সেনাবাহিনী, আইন শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী, নদী বিশেষজ্ঞ, প্রকৌশলী, শিক্ষক, সুশীল সমাজের প্রতিনিধি ও সাংবাদিকদের সমন্বয়ে একটি আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হয়। শ্যামাসুন্দরীকে পুনরুজ্জীবিত করতে তিনটি ধাপে পরিকল্পনা গ্রহণ করা হয়। তবে করোনার কারণে তা আবার থেমে যায়
দীর্ঘদিন ধরে শ্যামাসুন্দরী খালের সংস্কার কাজ না হওয়ায় ফুঁসে উঠেছে রংপুরের সচেতন সমাজ।
রোববার সকালে রংপুর নগরীর এসোড ট্রেনিং সেন্টারে বাংলাদেশ পরিবেশ আইনবীদ সমিতি-বেলা’র উদ্যোগে ‘দখল-দূষণে বিপর্যস্ত শ্যামাসুন্দরী খাল : জনস্বাস্থ্য ও পরিবেশ রক্ষায় করনীয়’ শীর্ষক আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হয়। মহিলা পরিষদ রংপুর জেলা’র সভাপতি হাসনা চৌধুরীর সভাপতিত্বে আলোচনা সভায় প্যানেল আলোচকের বক্তব্যে বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক নদী বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক ড. তুহিন ওয়াদুদ বলেন, শ্যামাসুন্দরী ঘাঘট নদীর একটি অংশ। এক সময় এ নদীতে নৌ যাতায়াত ছিল। এজন্য রংপুর নগরীতে নবাবগঞ্জ, মীরগঞ্জ গড়ে উঠেছে। কিন্তু ১৭৮৭ সালে সংঘটিত ভূমিকম্পের কারণে নদীগুলো খাত পরিবর্তন করে। আর এতেই এক সময় মরে যায় ঘাঘট নদীর এ শাখাটি। গত ৩০ বছর আগে কিভাবে পানি প্রবাহিত হতো। ঘাঘট থেকে শ্যামাসুন্দরীতে কেন পানি প্রবাহিত হচ্ছে না। কোথায় কোথায় পানি প্রবাহে প্রতিবন্ধকতা তৈরী হয়েছে তা আমাদের চিহ্নিত করতে হবে।
সুজনের রংপুর মহানগর সভাপতি অধ্যক্ষ খন্দকার ফখরুল আনাম বেঞ্জু বলেন, দীর্ঘদিন ধরে শ্যামাসুন্দরী খালের ঐতিহ্য ফিরিয়ে আনার দাবী জানিয়ে আসছে রংপুর নগরবাসী। প্রধানমন্ত্রী বলছেন খাল, বিল, জলাশয় সংস্কার করে পানির আধার তৈরী করতে হবে। অপরদিকে রংপুর নগরীর গুরুত্বপূর্ণ একটি খাল দখল হচ্ছে, দূষণ হচ্ছে কিন্তু প্রশাসনের কোন মাথা ব্যাথা নেই।
আলোচনা সভার প্রধান অতিথি রংপুর সিটি কর্পোরেশনের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা রুহুল আমিন মিঞা বলেন, শ্যামাসুন্দরী খালকে পুনরুজ্জীবিত করতে ইতোমধ্যে পরামর্শক নিয়োগ করা হয়েছে। আগামী ২৩ ডিসেম্বর রংপুর বিভাগীয় কমিশনারসহ প্রশাসনের কর্মকর্তা ও অন্যান্য সরকারী দপ্তর এবং শ্যামাসুন্দরী খাল পুনরুজ্জীবিতকরণ কর্মসূচীর সদস্যদের নিয়ে ওই পরামর্শক প্রতিষ্ঠান আলোচনাসহ তাদের পরিকল্পনা তুলে ধরবেন।
বেলা রাজশাহী কার্যালয়ের তন্ময় কুমার সান্যালের সঞ্চালনায় এতে প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন বেলার মেম্বার নেটওয়ার্ক সারওয়ার জামিল খন্দকার।