পাখির অভয়ারণ্য বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয় 

পাখির অভয়ারণ্য  বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয় 
পাখির অভয়ারণ্য  বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয় 

মেরিনা লাভলী ♦ তোমরা যখন শিখছো পড়া/মানুষ হওয়ার জন্য/ আমি না হয় পাখি হবো/ পাখির মত বন্য। কবি আল মাহমুদ তার পাখির মত কবিতায় সমাজের সব শৃঙ্খল ভেঙ্গে পাখির মত স্বাধীনভাবে ঘুরে-বেড়ানো ও প্রকৃতির সৌন্দর্যকে উপভোগ করতে চেয়েছিলেন।

পাখিদের এমন সৌন্দর্য দেখা যেন ডুমুরের ফুলের মত। নগরায়নের ফলে গাছপালা উজার করা হচ্ছে প্রতি বছর। ফলে নীড়ভাঙ্গা পাখিরা আশ্রয়হীন হয়ে পড়ছে। নানা প্রতিক‚ল পরিবেশে তৈরী হওয়ায় অনেক পাখি বিলুপ্তের দিকে ধাবিত হচ্ছে। পাখিদের জীবনে নেমে আসা এমন দুরাবস্থার মধ্যেও স্বস্তি¡র জায়গা করে নিয়েছে রংপুর বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়।

করোনাকালে প্রায় ৮ মাস ধরে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ। ৭৫ একরের বিশ্ববিদ্যালয়ে লাগানো ৩৫ হাজার গাছ বেড়ে সবুজে আচ্ছাদিত হয়েছে ক্যাম্পাসটি। নেই মানুষের তেমন আনাগোনা। কোলাহলমুক্ত পরিবেশে গাছে গাছে সুখের বাসা বেঁধেছে পাখিরা। এর মধ্যে ছোট বসন্তবৌরি, নীলগলা বসন্তবৌরী, তিলা মুনিয়া, ধলাগলা মাছরাঙ্গা, মেঘহও মাছরাঙ্গা, কাঠঠোকরা, সবুজ কাঠঠোকরা, পাকড়া কাঠঠোকরা, লাল-সাদা-কালো-হলুদ রংয়ের কাঠঠোকরা, ভাত শালিক, কাঠ শালিক, চিল, ছেলে ও মেয়ে মৌটুসী, পাপিয়া, ফটিকজল, তিলা ঘুঘু, সবুজ সুইচোরা, খুড়ুলে পেঁচা, দোয়েল, হলদে বক, লাটোরা, সুরেলা পাপিয়া, খঞ্জনা, কানাকুয়া, রাজঘুঘু, হুদহুদ, চাতক, চড়ুই, সবুজ সুইচোরা, ছোট চাপাখি, বুলবুলি, হাড়িচাচা, কসাই, বনচড়ুই, খয়রা পাখা পাপিয়া, চোখগেলো, কাক, ভোমরা ছোটন, সাতভাই সাতারে, ফিঙে, সাদা বক, ঝুটি শালিক, গোশালিক, বেনে বউ, সিপাহী বুলবুলিসহ অর্ধশতাধিক পাখির দেখা মিলেছে বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ে।

নতুন নতুন পাখির আগমনের খবরে বিশ্ববিদ্যালয়ে পাখির সৌন্দর্য দেখতে ও ছবি তুলতে আসছেন অনেকে। যদিও সম্প্রতি সরকারী নির্দেশনা অনুযায়ী ক্যাম্পাসে প্রবেশে কড়াকড়ি নির্দেশনা আরোপ করা হয়েছে। 

বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী পাখি প্রেমী রাকিন জহির প্রায় সময় আসেন বিশ্ববিদ্যালয়ে পাখির ছবি তুলতে। তিনি বলেন, বিশ্ববিদ্যালয় বন্ধ হওয়ার পর থেকে আমাদের ক্যাম্পাসে প্রচুর পরিমাণ পাখি আসতে থাকে। বিভিন্ন প্রজাতির পাখি এখানে রয়েছে। আমার সংগ্রহে ২০ থেকে ৩০ প্রজাতির পাখির ছবি রয়েছে। 

বিশ্ববিদ্যালয়ে ঘুরতে আসা পাগলাপীরের শিক্ষার্থী নভেল চৌধুরী বলেন, পাখির কলতানে মুগ্ধ হচ্ছি। বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রত্যেকটি সড়ককে সবুজ গাছপালা তার সবুজের চাদর দিয়ে ঢেকে রেখেছে। গাছের ডালে ডালে বিভিন্ন প্রজাতির পাখির এ গাছ থেকে ও গাছ উড়ে বেড়ানো দেখছি। যা খুবই ভালো লাগছে। 
বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনসহ বিভিন্ন সংগঠন, সরকারী-বেসকারী প্রতিষ্ঠান, ব্যক্তির দেয়া ৩৫ হাজারেরও বেশি ফলদ, বনজ ও ঔষধী গাছে সুশোভিত হয়েছে বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাস। সেই সব গাছে পাখির কিচিরমিচির শব্দ ও কলকাকুলির প্রেমে পড়েছেন এ শিক্ষক। তাই নাওয়া-খাওয়া ভ‚লে করোনাকালীন বিশ্ববিদ্যালয়ে আসা ৫০ প্রজাতিরও বেশি পাখির ছবি তুলেছেন তিনি। 

ড. তুহিন ওয়াদুদ বলেন, গত ৭ থেকে ৮ বছর পরিশ্রম করে এ বিশ্ববিদ্যালয়ে ৩৫ হাজার গাছ রোপন করেছি। সেই গাছ ডেকে এনেছে নতুন নতুন পাখি। যে পাখি আমরা সচরাচর দেখতে পারি না। দূলর্ভ প্রজাতির পাখি ক্যাম্পাসে আসতে শুরু করেছে। আমি নিজেই অর্ধশতাধিক বিভিন্ন প্রজাতির পাখির ছবি তুলেছি। আমি মনে করি এক সময়ে মরুভ‚মির মত যে ক্যাম্পাস ছিল তা এখন রংপুর অঞ্চলের সবচেয়ে বড় পাখির অভয়ারণ্যে পরিণত হচ্ছে। 

বিশ্ববিদ্যালয়ের জনসংযোগ দপ্তরের সহকারী পরিচালক, গণযোগযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের শিক্ষক তাবিউর রহমান প্রধান বলেন, বিশ্ববিদ্যালয়ে গাছ লাগানো হলেও সেটির কোন শৃঙ্খলা ছিল না। বিশ্ববিদ্যালয়ে বেড়ে উঠা গাছগুলো যেন দৃষ্টিনন্দন হয় সেলক্ষ্যে একটি পরিবেশ সংরক্ষণ কমিটি করেছে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন। এই কমিটি পরিবেশ সংরক্ষণের জন্য কাজ করছে। বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসকে পাখিদের অভয়ারণ্য করার জন্য পরিকল্পনা গ্রহণ করা হয়েছে।