রংপুরে জনপ্রিয় হচ্ছে ছাদ বাগান, মেটাচ্ছে পরিবারের পুষ্টির চাহিদা

ফলের পাশাপাশি আছে সবজি ও বিভিন্ন প্রকারের ফুলের গাছ

রংপুরে জনপ্রিয় হচ্ছে ছাদ বাগান, মেটাচ্ছে পরিবারের পুষ্টির চাহিদা

স্টাফ রিপোর্টার ♦ দেশের প্রাচীনতম জেলা রংপুর। রংপুর জেলা বিভাগ হওয়ার পরেই দ্বিগুণ হারে বাড়ছে জনসংখ্যা সাথে বাড়ছে আবাসস্থল। এখন চারিদিকে উঠছে দালানকোঠা। এতে কমছে ফসলি জমি। ফলে দিন দিন ছোট হয়ে আসছে চাষাবাদের জমি পরিমাণ। অন্যদিকে কংক্রিটের নগরীতে মানুষের গাছ লাগানোর মতো জায়গা পাওয়া এখন দুষ্কর হয়ে পড়েছে।
তাই শখ করে বাগান কিংবা নিজের পরিবারের পুষ্টির চাহিদা মেটানোর জন্য নগরীর মানুষদের জন্য ছাদের কোনো বিকল্প নেই। এসব দিক বিবেচনা করে রংপুরে বেশ জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে ছাদ বাগান, দিনে দিনে বৃদ্ধি পাচ্ছে ছাদ বাগান। সৌখিন বাগানিরা বাড়ির ছাদে গড়ে তুলেছেন নানা ধরনের ফল, ফুল ও সবজি বাগান। এসব ছাদ বাগানে বিভিন্ন জাতের মৌসুমী ফল, ফুল ও সবজি শোভা পাচ্ছে। বাগান থেকে পরিবারের সবজি ও ফলের চাহিদা মেটাচ্ছে অনেকেই।
কৃষি স¤প্রসারণ অধিদফতর সূত্রে জানা যায়, রংপুরে ৩০০ অধিক ছাদ বাগান রয়েছে। এ সংখ্যা প্রতিনিয়ত বাড়ছে। সৌখিন বাগানিরা আরও উদ্যোগী হয়ে উঠছেন। ফলে বাড়ির ছাদে বিভিন্ন ধরনের ফলের গাছ ও নানা জাতের সবজি ও ফুলের চাষ করা হচ্ছে। এ যেন বিপন্ন প্রকৃতির মাঝে সবুজের বিপ্লব। বিশুদ্ধ অক্সিজেনের কারখানা। আর এই অক্সিজেনের কারখানা গড়ে তুলেছেন রংপুরের অনেক সৌখিন বৃক্ষপ্রেমী। কৃষি স¤প্রসারণ অধিদফতরের সহযোগিতায় অনেকেই নিজের বাড়ির ছাদে গড়ে তুলেছেন ফল ও সবজির বাগান। অবসর সময়ে বাগান পরিচর্যা করছেন বাগানিরা। রংপুরের ছাদ বাগান গুলোতে ফলের পাশাপাশি আছে সবজি ও বিভিন্ন প্রকারের ফুলের গাছ।
সৌখিন ছাদ বাগানি রানা মাসুদ বলেন, গাছের প্রতি ভালোবাসা থেকে বাগান করেছি। পরিবারের পুষ্টির চাহিদাও মিটছে। পাশাপাশি অক্সিজেনেরও চাহিদা পূরণ হচ্ছে। এ ছাড়াও আছে বিভিন্ন প্রকার গোলাপ, রাধাচূড়া, রজনীগন্ধাসহ বিভিন্ন প্রকার ফুল। অবসর সময়ে বাগানে সময় দিচ্ছি। নিরাপদ ফল ও সবজি ছাড়াও পাচ্ছি অক্সিজেন। আমার ছাদ বাগান হয়ে উঠেছে অক্সিজেন চেম্বার।
নগরীর ইসলামপুর হনুমানতলার ব্যবসায়ী বৃক্ষপ্রেমী বসির আহমেদ নিজ বাড়ির ছাদে গড়ে তুলেছেন ফলের বাগান। তিনি বাড়ির ছাদে দুই বছর আগে গড়ে তুলেছেন ফল ও সবজির বাগান। তাকে বাগানের কাজে সহযোগিতা করেন কন্যা ও স্ত্রী। বাগানে কমলা, মাল্টা, ডালিম, হিমসাগর, ব্যানানা ম্যাঙ্গ, হাঁড়িভাঙা, ফজলি আম, লেবু, পেয়ারা, আমড়া, ড্রাগন, শরিফা, জাম্বুরাসহ ২৩ প্রকার ফলের গাছ। আছে করলা, চিচিংগা, ঝিংগা, কাচা মরিচ, ক্যাপসিকাম, পুদিনা পাতা, লাল শাক ও বিভিন্ন প্রকারের ফুলের গাছ। বর্তমানে বাগানে ঝুলছে বিভিন্ন প্রকারের মৌসুমী ফল ও সবজি।
সমাজ কল্যাণ বিদ্যাবীথি স্কুল এন্ড কলেজের শিক্ষক মতলুবুর রহমান সাজুর বাগানে ঝুলছে, মাল্টা, কমলা, কামরাঙ্গা, ছবেদা, আমড়া, কদবেল, ডালিম, আমলকিসহ বিভিন্ন প্রকারের ফল। দেখলে মন জুড়িয়ে যায়। কিছু ফলগাছ আছে সারাবছর ফল ধরে। ছাদের বাগানে চাষ করা বিষমুক্ত ফল নিজেরা খাচ্ছেন, আত্মীয়-স্বজন ও প্রতিবেশীদের দিচ্ছেন। বর্তমানে বাগানে বিভিন্ন প্রকার ফল ধরেছে। বাড়ির পুষ্টির চাহিদা পূরণ করতে সম্ভব হচ্ছে। তার দেখাদেখি বিভিন্ন ব্যক্তি ছাদে বাগান করার আগ্রহ প্রকাশ করেছে। আমরা কৃষি বিভাগ থেকে বিভিন্ন প্রকার সহযোগিতা করে আসছি।
রংপুর পরিবার পরিকল্পনা বিভাগীয় অফিসের সুপাররেনন্টেডেন্ট মো: আহসান জামিল তাদের অফিসের পাচতলার ছাদে আম ,জাম মাল্টা, কমলা, কামরাঙ্গা, ছবেদা, আমড়া, কদবেল, ডালিম, আমলকিসহ বিভিন্ন প্রকারের ফলে গাছ আছে । তিনি জানান  বর্তমানে  ৯ টি আম প্রচুর পরিমানে ধরেছে । সেজনাল ফুল ও ফল বেশী পরিমানে গাছ আছে । তিনি বলেন অবসর সময় স্বাস্থ্য পরিচালক স্যার ও ডিডি স্যার ছাদে উঠে  বিশুদ্ধ অক্সিজেন গ্রহণ করেন । অনেকেই এখানে এসে অবসর সময় কাটানে পছন্দ করেন । 


রংপুর বেগম রোকেয়া কলেজের সহযোগী অধ্যাপক মো: দুলাল মিয়া জানান তার তিন তলা ছাদে দেশী বিদেশী বিভিন্ন জাতের গাছ লাগিয়েছেন । এর মধ্যে উল্লেখ যোগ্য হচ্ছে  আম , কলা ,মাল্টা, কমলা, কামরাঙ্গা, ছবেদা, আমড়া, কদবেল, ডালিম, আমলকিস । তিনি আবসর সময় নিচেই পরিচর্যা করে থাকেন । ছাদের বাগানে চাষ করা বিষমুক্ত ফল নিজেরা খাচ্ছেন, আত্মীয়-স্বজন ও প্রতিবেশীদের দিচ্ছেন।
রিসালাত ছাদ বাগান নার্সারীর উদ্যোক্তা হযরত আলী জানান, এটি রংপুরের একমাত্র ছাদ বাগান নার্সাারী। এখানে হাজার প্রজাতির ফুল, ফলের গাছগাছালি রয়েছে। নগরীতে প্রায় বাড়ির ছাদে এখন ছাদ বাগান করছে। একটি ছাদকে কিভাবে ঢেলে সাজানো যায়। সেখান থেকে কিভাবে ফল, সবজি পাওয়া যাবে সেটি পরিকল্পনা দেয়া হয়। প্রথমে শখ থেকে শুরু করলেও মানুষ ধীরে ধীরে ছাদ বাগান থেকে প্রাপ্তি খোজে।
রংপুর জেলায় ছাদ কৃষি জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে। আমরা যদি সবুজ নগরী চাই, তাহলে দু’ভাবে আমরা করতে পারি। পরিকল্পিতভাবে বৃক্ষরোপণ করে। প্রত্যেকটি সুউচ্চ ছাদ ব্যবহার করে। ছাদে বাগান করার ক্ষেত্রে আমরা প্রযুক্তিগত সহায়তা দিচ্ছি।
তিনি আরও বলেন, ছাদ বাগান থেকে প্রায় বারো মাসই ফল এবং সবজির চাহিদা পূরণ করা সম্ভব। সেদিকে লক্ষ্য রেখেই আমরা ছাদ বাগানের পরামর্শ দিয়ে থাকি। আগামী দিনে ছাদ বাগানের মাধ্যমে পুষ্টি ও নিরাপত্তা পূরণ হবে।
চাষাবাদের জমি কমে আসলেও, মানুষের মন থেকে হারিয়ে যায়নি সবুজের হাতছানি পাওয়ার আশা। এ কারণেই আধুনিক ফ্ল্যাট বাড়িগুলোর ছাদে সকলেই ফল ও ফুলের বাগান গড়ে তুলবেন এমটাই প্রত্যাশা কৃষি কর্মকতার।
রংপুর কৃষি স¤প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক কৃষিবিদ ওবায়দুর রহমান মন্ডল জানান, ছাদ বাগান ব্যয় বহুল হলেও সৌখিন বাগানিরা থেমে নেই। কেননা, ছাদ বাগান থেকে কীটনাশক মুক্ত নিরাপদ ফল ও সবজি উৎপাদন করা সম্ভব। তাছাড়া গাছের প্রতি ভালোবাসা থেকে বাড়ির ছাদে ফল, সবজি ও ফুল বাগান করে পরিবারের পুষ্টির চাহিদা মেটাচ্ছেন অনেকেই। পাশাপাশি আত্মীয়-স্বজন ও প্রতিবেশীদেরও চাহিদা পূরণ করতেই ছাদ বাগানের প্রতি ঝুঁকছে শৌখিন মানুষ।