বিদ্রোহী প্রার্থীতে দুঃশ্চিন্তায় আওয়ামী লীগ, স্বস্তিতে বিএনপি

বিদ্রোহী প্রার্থীতে দুঃশ্চিন্তায় আওয়ামী লীগ, স্বস্তিতে বিএনপি

মেরিনা লাভলী ♦ জমে উঠেছে বিড়ি শিল্প এলাকাখ্যাত রংপুরের কাউনিয়া উপজেলার হারাগাছ পৌরসভা নির্বাচন। আওয়ামী লীগ প্রার্থী ও আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী প্রার্থী এবং বিএনপি প্রার্থী সমান তালে নির্বাচনী প্রচারণা চালিয়ে যাচ্ছেন। নিজ ঘরের দু’প্রার্থীর কারণে দিধা-দ্বন্দ্বে ভূগছেন আওয়ামী লীগের কর্মী-সমর্থকরা। এনিয়ে আওয়ামী লীগ দুঃশ্চিন্তায় থাকলেও স্বস্তিতে বিএনপি। এদিকে আওয়ামী লীগের মাঝে বিদ্রোহকে পুঁজি করে নির্বাচনে ভোটারদের মন জয় করতে মাঠ চষে বেড়াচ্ছেন বিএনপি প্রার্থী। 

আগামী ২৮ ফেব্রুয়ারী অনুষ্ঠিতব্য রংপুরের কাউনিয়া উপজেলার হারাগাছ পৌরসভা নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন আওয়ামী লীগের মনোনীত প্রার্থী ও বর্তমান মেয়র মোঃ হাকিবুর রহমান (নৌকা), পৌর আওয়ামী লীগের সাবেক সদস্য স্বতন্ত্র প্রার্থী মোঃ এরশাদুল হক (নারিকেল গাছ) ও বিএনপি’র মনোনিত প্রার্থী মোনায়েম হোসেন ফারুক (ধানের শীষ)। গত শুক্রবার কাউনিয়া উপজেলা অডিটরিয়ামে প্রতীক বরাদ্দের পর ৩ প্রার্থীই ভোট ও দোয়া নিতে ভোটারদের দ্বারে দ্বারে যাচ্ছেন। দিচ্ছেন পৌরসভার উন্নয়নে নানা প্রতিশ্রুতি। বর্তমান সরকারের উন্নয়নের ধারার সাথে পৌর এলাকার উন্নয়নে আরেকবার সুযোগ চাচ্ছেন আওয়ামী লীগ প্রার্থী।

আওয়ামী লীগ থেকে দু’জন প্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বিতা করায় আওয়ামী লীগের কর্মী-সমর্থকরা দু’ভাগে বিভক্ত হয়ে পড়েছেন। বিগত ৫ বছর উন্নয়ন প্রকল্প আনতে না পারাসহ পৌরসভার কাঙ্খিত উন্নয়ন না হওয়ায় এ নির্বাচনে আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী প্রার্থীকে চিন্তা করছেন অনেকে। দলের সিদ্ধান্ত থেকে বেরিয়ে এসে নির্বাচনে অংশ নেয়ার অভিযোগে আওয়ামী লীগের প্রাথমিক সদস্য পদসহ সকল পদ থেকে বহিস্কৃত হয়েছেন আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী প্রার্থী মোঃ এরশাদুল হক। অপর দিকে দূর্নীতিমুক্ত একটি পরিচ্ছন্ন মডেল পৌরসভা গড়ার অঙ্গীকার নিয়ে নির্বাচনী প্রচারণা চালাচ্ছেন বিএনপি প্রার্থী। জনসম্পৃক্ততা বাড়ানোসহ বিএনপি’র প্রার্থী আওয়ামী লীগের মধ্যে দ্বন্দ্বকে কাজে লাগাতে পারলে সহজে নির্বাচনী বৈতরনী পাড় করতে পারবে বলছেন নির্বাচন বিশ্লেষকরা। 

জেলা সিনিয়র নির্বাচন কর্মকর্তার কার্যালয় থেকে জানা যায়, ১৬ দশমিক ৩২ বর্গ কিলোমিটার আয়তনের এ পৌরসভায় ৯টি ওয়ার্ড রয়েছে। এ নির্বাচনে ৯টি ওয়ার্ডে সাধারণ কাউন্সিলর পদে ৪৮ জন ও সংরক্ষিত মহিলা কাউন্সিলর পদে ১০ জন প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। হারাগাছ পৌরসভার ভোটার সংখ্যা ৪ হাজার ১৭ জন। এর মধ্যে পুরুষ ভোটার ২৩ হাজার ৬৯৩ জন ও নারী ভোটার ২৫ হাজার ৩২৪ জন।

এ ব্যাপারে আওয়ামী লীগের প্রার্থী মোঃ হাকিবুর রহমান বলেন, গত ৫ বছরে হারাগাছ পৌরসভার যে উন্নয়ন হয়েছে তা বিগত কোন মেয়র করতে পারেনি। আমার উপর আস্থা রেখে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এবারও আমাকে মনোনয়ন দিয়েছেন। এ নির্বাচনে ভোটারদের রায়ে আমি বিজয়ী হয়ে পৌরসভার উন্নয়নের ধারা অব্যহত রাখবো।  

স্বতন্ত্র প্রার্থী মোঃ এরশাদুল হক বলেন, প্রধানমন্ত্রীকে ভুল বুঝিয়ে অন্যজনকে মনোনয়ন দেয়া হয়েছে। ভোটারদের অকুন্ঠ সমর্থনের কারণে আমি নির্বাচনে এসেছি। আওয়ামী লীগের একজন নির্ভিক কর্মী হিসেবে বিজয়ী হয়ে প্রধানমন্ত্রীকে নিজ দলের পৌর মেয়র উপহার দেবো। 

বিএনপি প্রার্থী মোনায়েম হোসেন ফারুক বলেন, গত পৌরসভা নির্বাচনে আমি নির্বাচিত হয়েছিলাম। সেই সময় ষড়যন্ত্র করে আমাকে হারানো হয়েছে। আওয়ামী লীগের প্রতি জনগণের আস্থা নেই। এবার তাদের মধ্যেই দ্বন্দ্ব তৈরী হয়েছে। আমি আশা করছি হারাগাছবাসী আমাকে বিপুল ভোট জয়ী করবে।  

রংপুর জেলা সিনিয়র নির্বাচন কর্মকর্তা ও হারাগাছ পৌরসভা নির্বাচনের রিটার্নিং কর্মকর্তা মোঃ ফরহাদ হোসেন বলেন, ইভিএমের মাধ্যমে হারাগাছ পৌরসভা নির্বাচনের ভোটগ্রহণ অনুষ্ঠিত হবে। নির্বিঘ্নে ভোটাররা যেন তাদের ভোটাধিকার প্রয়োগ করতে পারেন সেজন্য পর্যাপ্ত নিরাপত্তা ব্যবস্থা রাখা হয়েছে। এছাড়া ভোটারদের সুবিধার্থে মক ভোটিং ও ইভিএম প্রদর্শনী হবে। প্রার্থীরা যেন তাদের আচারণ বিধি মেনে নির্বাচনী প্রচারণা চালান সেদিকে আমাদের নজরদারী রয়েছে। আশা করছি একটি অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচন আমরা হারাগাছবাসীকে উপহার দিতে পারবো।