রংপুরে ঘাতক রোগে মৃত্যুর প্রহর গুনছে ওরা তিন ভাই 

রংপুরে  ঘাতক রোগে মৃত্যুর প্রহর গুনছে ওরা তিন ভাই 

হাসেম আলী ♦ অবিশ্বাস্য হলেও সত্য মৃত্যুর প্রহর গুনছে ওরা তিনি ভাই। ঘাতক প্যারালাইসিস জাতীয় এক ধরনের রোগে তাদের পরিবারের সদস্যরা একে একে মৃত্যুবরণ করেছেন। এ ঘটনাটি ঘটেছে মাহিগঞ্জের আমতলা সংলগ্ন ট্যাকসোর দিঘী গ্রামে। 

জানা যায়, এ গ্রামের বাসিন্দা দেলোয়ার হোসেন। যিনি ১৯৯০ সালে প্রথম এক ধরনের প্যারালাইসিস রোগে আক্রান্ত হন। এ রোগের কারণে একজন ব্যক্তি নিজেকে স্থির রাখতে পারেন না। সারাক্ষণ কাঁপতে থাকেন। দেলোয়ার হোসেন এ রোগের প্রায় ৫ বছর ভোগার পর ১৯৯৫ সালে মারা যান। এরপর তার ভাই নুর ইসলাম এ রোগে আক্রান্ত হন এবং কিছু রোগে ভোগার পর তিনিও মারা যান। এরপর একইভাবে তার ছেলে জামাল হোসেন, মেয়ে রেহেনা বেগম ও নাজমা বেগম আক্রান্ত হন এবং কিছুদিন রোগে ভোগার পর একে একে সবাই মৃত্যুবরণ করেন। এরপর মৃত দেলোয়ার হোসেনের তিন ছেলে এবং এক মেয়ে এ রোগে আক্রান্ত হন। আক্রান্তরা হচ্ছেন নাসির হোসেন (৪৪), রফিকুল ইসলাম (৪২), বশির আহমেদ (৪০) এবং মেয়ে রুকসানা (৩৮)। বৈবাহিক কারণে রোকসানা অন্যত্র থাকলেও বর্তমানে আক্রান্ত এ তিনভাই একই বাড়িতে অবস্থান করছেন। তাদেরই এক বড় ভাই জাকির হোসেন তাদের দেখাশোনা করছেন। 

জাকির হোসেন জানান, তারা আক্রান্ত হওয়ার পর রফিকুল ইসলাম ও বশির আহমেদের স্ত্রী, তাদের দু’সন্তান রেখে অন্যত্র চলে গিয়ে আর ফিরে আসেননি। বাধ্য হয়ে ভাইদের তিনি নিজ বাড়িতে রাখেন। তিনি জানান, রোগের চিকিৎসার জন্য চিকিৎসকের শরনাপন্ন হয়েছিলেন তিনি। কিন্তু চিকিৎসক বলেছেন এ রোগের সুস্থ্য হওয়ার সুযোগ কম আর থাকলেও তা অত্যন্ত ব্যয় বহুল। কিন্তু তাদের আর্থিক সামর্থ্য না থাকায় সেদিকে আর আগানো সম্ভব হয়নি। বর্তমানে জাকির হোসেন ভাইদের নিয়ে মানসিক, আর্থিকসহ বিভিন্ন কষ্টে চরম দুঃশ্চিন্তায় দিনাতিপাত করছেন। জাকির হোসেনের পৈত্রিক খড়ের বাড়ি ছাড়া অন্য কোন জমি না থাকায় দিনমজুরী করে কোন রকমে সকলের ভরন পোষন চালিয়ে যাচ্ছেন। অনেকে তাদের এ দূর্দশায় সহানুভূতিশীল হয়ে সাহায্যও করেছেন। কিন্তু প্রয়োজনের তুলনায় তা অতি সামান্য। 

স্থানীয় শিক্ষক জাহাঙ্গীর আলম জানান, তাদের এ দুঃখ, কষ্ট,যন্ত্রণা দেখতে খুব কষ্ট হয়। তাদের কাছে গেলে তারা ফ্যাল ফ্যাল করে তাকিয়ে থাকে।তিনি তাদের চিকিৎসা ও স্বাভাবিক জীবন যাপনের জন্য দানশীল ব্যক্তিদের পাশাপাশি সরকারী সহায়তার জোর আবেদন জানান।