ফিরোজ চৌধুরীর আলোকচিত্র প্রদর্শনীতে শৈশবের স্মৃতিতে ভাসছেন দর্শনার্থীরা

স্টাফ রিপোর্টার ♦ এঁকে-বেঁকে চলে গেছে গ্রামীন মেঠোপথ। এর এক প্রান্তে লাঠিতে ভর করে হাঁটছে এক বৃদ্ধা। সূর্য প্রায় অস্তমিত। সুপারি গাছের শুকনো পাতায় বসে আছে দুই শিশু। তাদের পাতায় বসিয়ে টেনে নিয়ে যাচ্ছে আরেক শিশু। শৈশবের নির্মল আনন্দে যেন হারিয়ে গেছে তারা। কারো গায়ে কাপড় নেই, পায়ে জুতো নেই। খেলাধুলা আর আনন্দে হেসে লুটোপুটি হচ্ছে তারা। জসীম উদ্দিনের পল্লী বর্ষা কবিতার মত বাদলের জলে নাহিয়া এক মেয়ে, হেসে কুটি কুটি হয়। জীবনের সন্ধ্যে বেলায় বৃদ্ধার চিন্তামগ্ন থাকা কিংবা যৌবনে থাকা নারীর প্রাণবন্ত হাসি। সাধারণ-উপজাতি নারীদের জীবন-জীবিকা, শিশুদের শৈশব-কৈশোর, হাসি-আনন্দে মত্ত শিশুসহ বর্তমানের শহুরে জীবনে হারিয়ে যাওয়া শৈশবের নানা স্মৃতি। এসবকিছু ফুটে উঠেছে খ্যাতিমান ফটোসাংবাদিক, ডকুমেন্টরী ও চলচ্চিত্র নির্মাতা ফিরোজ চৌধুরীর আলোকচিত্র প্রর্দশনীতে। জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ১০৫ তম জন্ম বার্ষিকী উপলক্ষে রংপুর পাবলিক লাইব্রেরী মাঠে ১৩ তম একক আলোকচিত্র প্রদর্শনীর আয়োজন করেন ফিরোজ চৌধুরী। বুধবার (১৭ এপ্রিল) সকালে ফিতা কেটে আলোকচিত্র প্রদর্শনীর উদ্বোধন করেন, রংপুর জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ মোবাশ্বের হাসান। উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি ছিলেন, জেলা পুলিশ সুপার ফেরদৌস আলী চৌধুরী, প্রধানমন্ত্রীর সিনিয়র ফটোগ্রাফার এসএম গোর্কি, প্রেসক্লাবের সাধারণ সম্পাদক মেরিনা লাভলী। নারী ও শিশু বিষয়ক ১২৫টি আলোকচিত্র নিয়ে প্রদর্শনী আগামী ২১ এপ্রিল পর্যন্ত চলবে। প্রতিদিন সকাল ১০টা থেকে রাত ৯টা পর্যন্ত দর্শনার্থীরা বিনামূল্যে এ আলোকচিত্র প্রদর্শনী দেখতে পারবেন। প্রদর্শনী দেখতে আসা মানুষদের জন্য র‌্যাফের ড্র’রও ব্যবস্থা করা হয়েছে। উদ্বোধনের পর থেকেই রংপুর নগরীর বিভিন্ন সামাজিক, সাংষ্কৃতিক, রাজনৈতিক ও পেশাজীবি সংগঠনের মানুষ, স্কুল-কলেজের শিক্ষার্থীরা আলোকচিত্র প্রদর্শনীস্থলে আসতে শুরু করেন। তারা ঘুরে ঘুরে গ্রাম বাংলার নারী ও শিশুদের জীবন-জীবিকা, হারিয়ে যাওয়া ঐতিহ্য, শৈশবের দুরন্তপনার ছবি মাধ্যমে উপভোগ করেন। তারা জীবনের নানা রং দেখতে পান। ফিরে যান শৈশবের স্মৃতিতে। অনেকে মুঠোফোনের ক্যামেরায় পছন্দের ছবি তুলে সংরক্ষণ করেন।
রংপুর সরকারী বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী আনিকা বলেন, প্রদর্শনীতে এসে গ্রামের শিশুদের নানা ধরনের খেলাধুলার দৃষ্টিনন্দন ছবি দেখতে পেলাম। এছাড়া গ্রামীন নারীদের জীবন-জীবিকা নিয়ে বিভিন্ন ধরনের ছবি রয়েছে। প্রদর্শনীতে শিশুদের খেলাধুলা, নদীতে এক সাথে লাফ দিয়ে গোসল করা, ঘোরদৌড়, শাপলাফুল তোলাসহ বিভিন্ন মনোমুগ্ধকর ছবি রয়েছে। 
দর্শনার্থী নাহিদা ইয়াসমিন বলেন, টাউন হল এলাকা সাংস্কৃতিক চর্চার কেন্দ্র। এখানে আলোচিত্র প্রদর্শনী হওয়াতে বিভিন্ন বয়সী ও পেশার মানুষ আলোকচিত্রগুলো দেখতে পারছে। তারা নিজ দেশের মানুষ সর্ম্পকে জানতে পারছে। এ আয়োজন আমার অনেক ভাল লেগেছে।      
প্রধানমন্ত্রীর সিনিয়র ফটোগ্রাফার এসএম গোর্কি বলেন, স্বাধীনতার পর ১৯৮৮ সালে ফিরোজ চৌধুরী প্রথম একক আলোকচিত্র প্রদর্শনী করেছে। এটি তার ১৩ তম আলোকচিত্র প্রদর্শনী। তার নিউজ ফটোগ্রাফি সেন্স অনেক ভাল। যে সমস্ত ছবি প্রদর্শনীতে রাখা হয়েছে কোন ছবিরই ক্যাপশনের প্রয়োজন হয় না, কারণ ছবিই কথা বলে। তার ছবিতে দেশপ্রেম ফুটে উঠেছে। আমি তার সাফল্য কামনা করছি।   
ফটোসাংবাদিক ফিরোজ চৌধুরী বলেন, সাংবাদিকতা জীবনে আমি অনেক ছবি তুলেছি যার সবগুলো পত্রিকায় ছাপা হয়নি। সেগুলোকে আমি মানুষের সামনে তুলে ধরতে প্রদর্শনীর আয়োজন করেছি। এ থেকে মানুষ বিনোদন পাবে এবং আমার শিল্পকর্মগুলো দেখতে পারবে। প্রথম দিনেই আমি মানুষের ব্যাপক সাড়া পেয়েছি। 
রংপুর জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ মোবাশ্বের হাসান বলেন, রংপুর একটি ঐতিহ্যবাহী জেলা। এ জেলার সাংস্কৃতিক অঙ্গনকে এগিয়ে নিতে এ ধরনের আয়োজন অনেক বেশি প্রয়োজন। এমন কাজের সাথে সম্পৃক্ত মানুষদের অংশগ্রহণ ও শ্রমের মাধ্যমে আগামীতে সৃষ্টিশীল নতুন প্রজন্ম তৈরী হবে।