পথেই কেনো শিশুদের ঘর-বাড়ি
এই শিশু পথে ঘাটে কেন থাকবে?
মেহজাবিন তানিয়া ♦ বকুল ফুলের মালাটা নেন না আপা, দশটা টাকা দেন সারাদিন কিছুই খাইনি। রাস্তায় প্রতিনিয়ত হাটতে গেলে কিছু শিশু হাত পা ধরে দুই টাকার জন্যে পিছু লেগে থাকে। এসব শিশুদেরকেই আমরা মূলত বলে থাকি পথ শিশু।
রংপুর শহরের সুপার মার্কেট এলাকায় একটি অটো রিক্সার পিছু পিছু দৌড়াচ্ছে শিশু হিমু। পরনে অপরিষ্কার জামা চোখ দুটি কোটরে ঢুকে গেছে। বয়স ৭-৮ এর মাঝামাঝি। সারাদিন না খাওয়া শিশুটি ছুটছে মনুষের পিছু পিছু। বেলী ফুলের মালার বিনিময়ে কারো কাছে ১০টাকা চাচ্ছে কিন্তু কেউ সাহায্যের হাতটি বাড়িয়ে দিচ্ছে না। কেউ কেউ আবার দুর দুর করে তাড়িয়ে দিচ্ছে। এরকম দৃশ্য প্রতিদিনই দেখা যায়। কেউ ফুল বা বেলুন বিক্রি করে। দৃশ্য গুলো বাস্তবে চোখে পড়ে দিনে অনেকবার। অনেক সময় মনে দাগ কেটে যায়, আবার অনেক সময় মনে প্রশ্ন জাগে পথ শিশু পরিচয়ের জন্যই কি তাদের জন্ম? তাকে পথশিশু
কেন বলছি। সে পথে ঘাটে থাকে কি এজন্যই? তাহলে আবার প্রশ্ন করছি এই শিশু পথে ঘাটে কেন থাকবে? জানি এর কোন গ্রহনযোগ্য উত্তর আমাদের কাছে নেই।
তবে এর মুলে কী রয়েছে। জীবনের একদম শুরু থেকে নানা ধরনের বৈষম্যর শিকার হয় এই শিশুরা। অর্ধাহারে-অনাহারে দিন কাটানো শিশুগুলোর মাথার উপর জুটে না পরিবারের ছায়াটুকুও। একা আজকের দিনে যে ছোট ছোট শিশুরা 'রাস্তায় পত্রিকা, ফুল, বেলুন বিক্রি করে এর ওর কাছে হাত পেতে টাকা চায় তাদের ভবিষ্যৎ কী? যেই বয়সে তাদের হাতে থাকা উচিত বই খাতা, সেই বয়সে তারা কত নির্মমতার স্বীকার। এই বয়সে কারো হাতে প্লাস্টিকের বস্তা কেউ কেউ বা একবেলার খাবার জোগাড় করার জন্য কত মানুষের দুর্ব্যবহার সহ্য করছে! এই শিশুদের অনেকে আবার ভিক্ষাবৃত্তির ব্যবসা করছে। অনেকে আবার এই বঞ্চিত শিশুদের দিয়ে কিছু টাকার বিনিময়ে কত ঝুঁকিপুর্ন কাজ করিয়ে নিচ্ছে।
আমরা রাস্তা-ঘাট, হাট বাজারে যখন নিজের শিশু সন্তানদের পাশে নিয়ে হাটি কিন্তু এই শিশুগুলো যখন আমাদের কাছে আসে আমরা তাদের দুর দুর করে তাড়িয়ে দেই। ওরাও যে শিশু আমরা তা ভুলেই যাই।
এককথায় আমাদের মনুষ্যত্ব দিন দিন কমে যাচ্ছে এবং পথ শিশুর সংখ্যা দিনকে দিন বেড়ে যাচ্ছে। আমরা যদি বিবেক বুদ্ধি কাজে লাগিয়ে তাদের নিয়ে একটু ভাবনা চিন্তা করি তাহলে তাদের জীবনের জটিলতা সম্পর্কে আমাদের পরিষ্কার ধারণা তৈরি হবে। পথ শিশুরা কত কঠিন পরিস্থিতির স্বীকার হয় অনেক শিশু অনেক ঝুঁকিপুর্ন কাজ করে চুরি ছিনতাই এর সাথে জড়িত হয়। অনেক ঝুঁকিপূর্ণ পরিবেশ থেকে জিনিস সংগ্রহ করে বিক্রির জন্য। যার ফলে নিজের অজান্তেই তারা অনেক রোগে ভুগছে।
পথশিশুদের মধ্যে শতকরা ২০-২৫ ভাগ মেয়ে। তারা সবচেয়ে বেশি ঝুঁকির মধ্যে থাকে, পড়ে বখাটেদের নজরে। যার ফলে আমাদের সমাজের ক্ষতি হচ্ছে। এই ঘটনাগুলো পরিবার সমাজ ও রাষ্ট্রের জন্য অকল্যানকর।
শিশুদের স্বাভাবিক জীবন যাপন করতে দেওয়া সমাজ ও রাষ্ট্রের কর্তব্য।তাই সমাজের সচেতন মানুষদের ও পররাষ্ট্রকে এগিয়ে আসতে হবে পথশিশুদের জীবন মানোন্নয়নে।
প্রথমত আমাদের কাজ হবে। তাদের স্বাভাবিক জীবনে ফিরিয়ে আনা এবং তাদের খাবারের চাহিদা পূরণ করা। দ্বিতীয়ত, এলাকা ভিত্তিক পথ শিশুদের খুজে বের করে তাদের পড়াশোনার ব্যবস্থা করা। আমাদের সমাজ ও রাষ্ট্রকে সার্বক্ষনিক পথশিশুদের জীবন মান উন্নয়নে কাজ করতে হবে। সরকারের- উচিত হবে তাদের সব ভরন পোষনের দ্বায়িত্ব নেয়া। যাতে কোন পথশিশুর সৃষ্টি না হয়।