রংপুরে ধর্ষণ হত্যা মামলায় ৫ জনের যাবজ্জীবন, ১ জনের আমৃত্যু কারাদণ্ড

প্রেমের সম্পর্ক, বিয়ে করতে টালবাহানা, ধর্ষণ, হত্যা

নিউজডোর ডেস্ক ♦ রংপুরে কিশোরীকে গণধর্ষণ ও হত্যার ঘটনায় পৃথক মামলায় ৫ আসামীর আমৃত্যু ও এক আসামীর যাবজ্জীবন কারাদন্ড দিয়েছে আদালত। বৃহস্পতিবার (২৪ নভেম্বর) দুপুরে রংপুর নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনাল-২ এর বিচারক রোকনুজ্জামান গঙ্গাচড়া উপজেলার নরসিংহ মর্ণেয়ার কিশোরী শাহিনাকে (১৬) গণধর্ষণ ও হত্যার মামলায় আসামী মর্ণেয়ার হাজীপাড়া তালপট্টি ’র শামসুল আলমের ছেলে আবুজার (২১), আব্দুর রহমানের ছেলে আব্দুল করিম (২২), মতিয়ার রহমানের ছেলে নাজির হোসেন (২৫), মোফাজ্জল হোসেনের ছেলে আমিনুর রহমান (২২) ও মোঃ হান্নানের ছেলে আলমগীরকে (২০) আমৃত্যু কারাদন্ডসহ প্রত্যেককে এক লক্ষ টাকা অর্থদন্ড প্রদান করেন। রায় ঘোষণার সময় ৪ জন আসামী আদালতে উপস্থিত ছিল। এ মামলায় আলমগীর পলাতক রয়েছে। 
মামলা সূত্রে জানা যায়, আবুজারের সাথে শাহিনার প্রেমের সম্পর্ক ছিল। শাহিনা বিভিন্ন সময় বিয়ের কথা বললে আবুজার টালবাহানা শুরু করে। শাহিনা প্রেমের সম্পর্কটি তার বাবা-মাসহ গ্রামাবাসীকে জানিয়ে দেবে হুমকি দিলে আবুজার শাহিনাকে হত্যার পরিকল্পনা করে। ২০১৫ সালের ১৪ মে শাহিনাকে বাড়িতে একা পেয়ে কৌশলে বাড়ি থেকে ডেকে নির্জন স্থানে নিয়ে যায় আবুজার। এরপর আবুজার ও তার বন্ধুরা শাহীনকে গণধর্ষণসহ দেশীয় অস্ত্র দিয়ে হত্যা করে বাড়ির পার্শ্বে ধইঞ্চা ক্ষেতে ফেলে পালিয়ে যায়। পরদিন ১৫ মে স্থানীয়রা শাহিনার লাশ ধইঞ্চা ক্ষেতে দেখতে পেয়ে পুলিশে খবর দেয়। পুলিশ ঘটনাস্থলে উপস্থিত হয়ে লাশ উদ্ধার করে থানায় নিয়ে যায়। এ ঘটনায় শাহীনার বাবা আইয়ুব আলী ওইদিন গঙ্গাচড়া থানায় একটি হত্যা মামলা দায়ের করেন। মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা এসআই তৌহিদুল ইসলাম আবুজারসহ ৫ জনের বিরুদ্ধে আদালতে চার্জশীট দাখিল করেন। ১০ জনের সাক্ষ্য প্রমান শেষে বৃহস্পতিবার আদালত ৫ আসামীকে আমৃত্যু কারাদন্ড ও এক লাখ টাকা করে অর্থদন্ড প্রদান করেন। 
রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবি এম এ জাহাঙ্গীর আলম তুহিন বলেন, আদালতের রায়ে আমরা সন্তুষ্ট। বাদীপক্ষ ন্যায় বিচার পেয়েছে। এ রায় ভবিষ্যতে এমন অপরাধ করা থেকে মানুষকে বিরত রাখবে বলে আমি মনেকরি। 
অপরদিকে তারাগঞ্জে কিশোরী ধর্ষণ মামলায় আসামী মিঠুন শেখ ওরফে সবুজকে (২৬) যাবজ্জীবন সশ্রম কারাদন্ড দিয়েছে আদালত। বৃহস্পতিবার দুপুরে নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনাল আদালত-৩ এর বিচারক এম আলী আহমেদ এ রায় প্রদান করেন। এছাড়া আসামীকে ৫ হাজার টাকা অর্থদন্ড অনাদায়ে আরও এক মাসের বিনাশ্রম কারাদন্ড প্রদান করা হয়। রায় প্রদানের সময় আসামী সবুজ আদালতে উপস্থিত ছিলো। সবুজ বদরগঞ্জ উপজেলার গোপালপুর শেখেরহাট এলাকার মোজাহার শেখের ছেলে। এ মামলার সাথে সম্পৃক্ততা না থাকায় অপর ৪ জন আসামীকে খালাশ প্রদান করেছে আদালত।
মামলা সূত্রে জানা যায়, রংপুরের তারাগঞ্জের সয়ার ইউনিয়নের দামোদরপুর কাজীপাড়া বাসিন্দা কিশোরী (১৬) গত ২০২০ সালের ৭ ডিসেম্বর ধর্ষনের শিকার হয়। পূর্ব পরিচয়ের জেরে কিশোরীকে ওই দিন রাত পৌণে ১০ টায় মোবাইল ফোনে বাড়ির পার্শ্বে পুকুর পাড়ে ডেকে আনে সবুজ। এরপর সেখানে কিশোরীকে জোরপূর্বক ধর্ষন করে পালিয়ে যায় সবুজ। এ ঘটনায় ২০২০ সালের ১১ ডিসেম্বর ওই কিশোরীর বাবা বাদী হয়ে তারাগঞ্জ থানায় মামলা দায়ের করেন। মামলার তদন্ত শেষে চলতি বছরের ২৯ মে সবুজসহ ৫ জনের বিরুদ্ধে আদালতে চার্জশীট দাখিল করে তদন্তকারী পুলিশ কর্মকর্তা মমতাসির হাসান মাসুম। গত ৩০ আগস্ট মামলার চার্জশীট ট্রাইব্যুনাল কর্তৃক গৃহীত হয় ও বিচার কার্যক্রম শুরু হয়। এ মামলায় বাদী ও তার পরিবারসহ ১১ জন সাক্ষ্য দিয়েছেন। এতে সন্দেহাতীতভাবে সবুজের বিরুদ্ধে অভিযোগ প্রমাণিত হওয়ায় তাকে যাবজ্জীবন কারাদন্ড প্রদান করে আদালত।
রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবি তাজিবুর রহমান লাইজু বলেন, মামলার রায়ে আমরা সন্তুষ্ট। বাদীপক্ষ ন্যায় বিচার পেয়েছে।