মাঠের হাসি, বাজারে বিলীন

সবজি’র ন্যায্য দাম পাচ্ছেন না রংপুরের কৃষক

মাঠের হাসি, বাজারে বিলীন

স্টাফ রিপোর্টার ♦ সবজি’র ন্যায্য দাম পাচ্ছেন না রংপুরের কৃষক। মাথার ঘাম পায়ে ফেলে উৎপাদন করা ফসলের দাম না পেয়ে ক্ষতিগ্রস্থ হচ্ছেন তারা। করোনার অজুহাতে অর্ধেক দামে পাইকাররা সবজি কিনছেন অভিযোগ কৃষকদের। গত বছরের মত এবারও লকডাউনে কৃষকদের পণ্য পরিবহনে সার্বিক সহযোগিতা প্রদানের কথা জানিয়েছে কৃষি বিভাগ। 

রংপুর জেলার সবজি উৎপাদনের প্রসিদ্ধ মিঠাপুকুর উপজেলা। মঙ্গলবার সকালে মিঠাপুকুর উপজেলার জায়গীরহাট, রানীপুকুর ইউনিয়নের বিভিন্ন এলাকা ঘুরে দেখা গেছে, কৃষকের বিস্তৃর্ণ মাঠ সবজিতে ভরে গেছে। কাঁকরোল, পানি কুমড়া, বরবটি, করলা, ঢেঁড়শ, লাউসহ বিভিন্ন সবজির পরিচর্যা ব্যস্ত সময় পাড় করছেন কৃষক। কেউ আগাছা দমন, কেউ বা পোকা-মাকড়ের আক্রমণ পর্যবেক্ষণ, কেউ বা সবজি উত্তোলনের কাজে ব্যস্ত। মাঠের সবজিগুলো তুলে রাস্তার পাশে রেখে মেপে প্লাটিকের ঝুঁড়িতে ভরে ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে আসা পাইকারদের হাতে তুলে দেয়ার কর্মযজ্ঞ চালিয়েছে কৃষক। মাঠের ফসল ভালো হলেও ফসলের দাম হঠাৎ কমে যাওয়া চিন্তিত কৃষক। পাইকাররা লকডাউনের অজুহাত দেখিয়ে অর্ধেক দামে কিনছে সবজি। মানুষ ঢাকা ছাড়ছে তাই বিক্রি করতে না পারার আশংঙ্কায় কম দামে সবজি কিনছে পাইকাররা অভিযোগ কৃষকদের। 

মিঠাপুকুর দূর্গাপুর বাতাসন এলাকার কৃষক হাসানুর রহমান (৩২) বলেন, ১৫ শতক জমিতে বরবটি আবাদ করেছি। ২ থেকে ৩ দিন পর পর ক্ষেত থেকে প্রায় ৪ মন বরবটি তোলা যায়। শুরুতেই প্রতি মন বরবটি বিক্রি হয়েছে ৭ থেকে ৮’শ টাকা মন। কিন্তু এখন ৩’শ টাকা মন কিনছে পাইকাররা। এই এলাকায় অনেক বরবটি উৎপাদন হয়েছে। তাই স্থানীয় বাজারেও দাম পাওয়া যাচ্ছে না। ঢাকার পাইকাররা লকডাউনের কথা বলে অর্ধেক দামে সবজি কিনছে। বাধ্য হয়েই আমাদের সবজি বিক্রি করতে হচ্ছে। 

একই এলাকার অপর চাষী গোলাম রব্বানী বলেন (৩৫), সবজি চাষ করে এখন দাম পাচ্ছি না। পাইকাররা  বলছে ঢাকা থেকে মানুষজন গ্রামে চলে আসছে। তাই সবজি বেশি দামে কিনতে তারা ক্ষতিগ্রস্থ হবে। এছাড়া লকডাউনের কথা বলে অনেক পাইকার সবজি কিনতে আসছে না। 

রানীপুকুর ইউনিয়নের নয়াপাড়া গ্রামের মিলন মিয়া (২৫) বলেন, ২৫ শতক জমিতে কাঁকরোল আবাদ করেছি। প্রচুর খাটুনি। এখন দাম মাত্র ৮ থেকে ১০টাকা কেজি। তাই আমাদের পোষাচ্ছে না। প্রতিদিন বরবটি ক্ষেত থেকে তুলতে ৪ জন শ্রমিক লাগে। তাদের পারিশ্রমিক দিতে দেড় হাজার টাকা লাগে। কিন্তু বরবটির মন ৪’শ টাকা হওয়ার কারণে শ্রমিকের মজুরী দিতেই টাকা শেষ। উৎপাদন খরচও উঠছে না। এভাবে চলতে থাকলে আমাদের করুণ পরিণতি হবে।

রংপুর কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সূত্রে জানা যায়, চলতি মৌসুমে রংপুর জেলায় মহানগরসহ ৮ উপজেলায় শাক-সবজি আবাদ হয়েছে ৯ হাজার ৪৮০ হেক্টর জমিতে। এর মধ্যে রংপুর নগরীতে ৭৭৫ হেক্টর, রংপুর সদরে ৭১৫ হেক্টর, কাউনিয়ায় ৩৪৫ হেক্টর, গঙ্গাচড়ায় ৭১৫ হেক্টর, মিঠাপুকুরে ২ হাজার ৮০ হেক্টর, পীরগঞ্জে ২ হাজার ৫’শ হেক্টর, পীরগাছায় ৯৮০ হেক্টর, বদরগঞ্জে ৬’শ হেক্টর, তারাগঞ্জে ৭৭০ হেক্টর। গত বছরের তুলনায় এ বছর ৩৮৫ হেক্টর জমিতে শাক-সবজির আবাদ বেড়েছে। ধানসহ অন্যান্য খাদ্যশস্যের তুলনায় শ্রম, উৎপাদন খরচ ও ঝুঁকি কম হওয়ায় শাক-সবজি আবাদে ঝুঁকছেন কৃষক বলে মনে করছে কৃষি বিভাগ। 

রংপুর কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক ওবায়দুর রহমান মন্ডল বলেন, রংপুরে এবার শাক-সবজির উৎপাদন ভালো হয়েছে। করোনা পরিস্থিতির কারণে লকডাউন দিয়েছে সরকার। এতে করে পরিবহন চলাচল সীমিত হয়েছে। তবে কৃষি পণ্য পরিবহন স্বাভাবিক রয়েছে। ঢাকাসহ বিভিন্ন জেলার পাইকাররা সবজি কেনা, পরিবহন কিংবা অন্য কোন শংঙ্কা থেকে রংপুরে কম আসছে। যার কারণে কৃষকরা সবজির দাম কম পাচ্ছে। অপরদিকে ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন এলাকায় সবজির দাম চড়া রয়েছে। তাই কৃষি বিভাগ বিপণন অধিদপ্তর ও জেলা প্রশাসনকে সাথে নিয়ে রংপুরের উৎপাদিত সবজি দেশের বিভিন্ন প্রান্তে নির্বিঘ্নে পৌঁছে দিতে কাজ করে যাচ্ছে।