একজন সত্যিকারের নায়ককে হারালো বাংলাদেশ পুলিশ

একজন সত্যিকারের নায়ককে হারালো বাংলাদেশ পুলিশ

একজন সত্যিকারের নায়ককে হারালো বাংলাদেশ পুলিশ, আমি হারালাম একজন অত্যন্ত বিশ্বস্ত ও প্রিয় সহকর্মীকে…..

আজ সকালে আমার অত্যন্ত একজন বিশ্বস্ত, কাছের ও প্রিয় সহকর্মী এসআই পেয়ারুল ইসলাম রংপুরের হারাগাছে এক মাদকসেবীকে ধরতে গিয়ে ছুরিকাঘাতে গুরুতর আহত হয়ে রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন আছেন বলে জানতে পারি। এএসআই পেয়ারুলের বুকে ও পেটে নির্মমভাবে উপর্যুপরি আঘাতের ছবিগুলো দেখে আঁতকে উঠি। হামলার নৃশংসতা আমার বুকের ভিতর শেলের মত আঘাত করে। বুকের ভেতর একটা মোচড় দিয়ে ওঠে। আহত পেয়ারুলের শারীরিক অবস্থার অবনতি নিয়ে চিন্তাভাবনা ও সংশয়ের মধ্যেই ৫ মিনিট পরেই জানতে পারি, তিনি সব দায়িত্বকে ছুটি দিয়ে চিরতরে পরপারে চলে গেছেন (ইন্না-লিল্লাহি ওয়া ইন্নাইলাইহি রাজিউন)। খবরটা আমাকে একেবারেই হতবাক, বিহ্বল ও নির্বাক করে দেয়। শোকে কাতর হয়ে যায় আমার মন। যেন খুব একজন কাছের ও নিকটাত্মীয়কে হারালাম। এরকম অনুভূতি আমাকে নাড়া দেয়। বাবাকে হারানোর শোক ও বেদনার পরে, পেয়ারলের মৃত্যুর খবরটি আমাকে সবচেয়ে বেশি ব্যথিত করে।

পরলোকগত এএসআই পেয়ারুল অত্যন্ত সাহসী, দক্ষ, যোগ্য, সৎ, নিষ্ঠাবান ও পেশাদার পুলিশ অফিসার ছিলেন। জনসাধারণকে আইনি সেবা দিতে তিনি সবসময় অত্যন্ত সক্রিয় ও নিবেদিত ছিলেন। সকল সংকীর্ণতা ও লোভ-লালসার ঊর্ধ্বে থেকে এএসআই পেয়ারুল সর্বদা জনসাধারণকে ন্যায়সঙ্গত সেবা দিতে কুন্ঠাবোধ করেন নি। মানুষের জান-মাল রক্ষা, আইনের শাসন প্রতিষ্ঠা ও অন্যায়কে রুখে দিত সে সবসময় সোচ্চার ছিলেন। অন্যায় ও অপরাধীদের সাথে এএসআই পেয়ারুল কখনোই আপস করতেন না। অন্যায় ও অনিয়মের বিরুদ্ধে তার অনড় ও অবিচল অবস্থানের কারণে জনগণ ও পুলিশের মাঝে সে খুব জনপ্রিয় ছিল। পুরো রংপুর মহানগরী জুড়েই তার ব্যাপক সুনাম ও সুখ্যাতি ছিল। এএসআই পেয়ারুল যে আমার খুব বিশ্বস্ত ও আস্থাভাজন অফিসার এটিও বেশিরভাগ মানুষই জানতো। একথা নির্দ্বিধায় বলা যায় পেশাগত জীবনে এএসআই পেয়ারুলের মত দক্ষ, নির্ভীক ও সৎ অফিসার পাওয়া ও তার সাথে কাজ করাটা সৌভাগ্যের বিষয়। সত্যিই আমি তাকে নিয়ে গর্ব করি।

আমরা সিনেমা ও নাটকে নায়ককে দেখি অন্যায়ের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ ও প্রতিরোধ গড়ে তুলতে। এসআই পিয়ারুল তেমনি বাস্তব জীবনের একজন নায়ক ছিলেন। অপরাধীদের কাছে এএসআই পিয়ারুল ছিলেন একজন আতঙ্কের নাম। পরম করুনাময় মহান আল্লাহর রহমতে সে দেখতে যেমন সুন্দর ছিল, তেমনিভাবে তার কাজকর্ম মন-মানসিকতা, মেধা, দক্ষতা সবকিছুই ছিল অত্যন্ত সুন্দর। তার হাতের লেখা ছিলো খুবই সুন্দর, সুনিপুণ এবং মনোমুগ্ধকর। সে ছিল বঞ্চিত, নিপীড়িত ও শোষিত মানুষের পক্ষে একজন সত্যিকারের নায়ক। বাংলাদেশ পুলিশ তাকে হারিয়ে একজন সম্পদকে হারালো।

সে আমার অত্যন্ত বিশ্বস্ত, আস্থাভাজন ও প্রিয় একজন অফিসার ছিলেন। রংপুর মেট্রোপলিটন পুলিশের মাহিগঞ্জ জোন( মাহিগঞ্জ ও হারাগাছ থানা) ও ডিবিতে কর্মরত অবস্থায় পরলোকগত এএসআই পেয়ারুল ইসলামকে দিয়ে আমি কয়েকটি উল্লেখযোগ্য গুরুত্বপূর্ণ কাজ করিয়ে ছিলাম। যে কাজগুলো সারা দেশে আলোড়ন তৈরি করেছিল। তন্মধ্যে কয়েকটি ছিল গোবিন্দগঞ্জ থেকে জিনের বাদশা চক্র গ্রেপ্তার, রংপুর শহরের বিভিন্ন স্থান থেকে দুইজন সরকারি কর্মচারীসহ সরকারি ওষুধ চোরাচালান চক্র গ্রেপ্তার, একটি বিদ্যালয়ের জলাবদ্ধতা নিরসন, রংপুর শহরের সাতমাথা প্রবেশদ্বারকে নিরাপদ ও যানজটমুক্ত করণ, মাদকের কয়েকটি বড় কাজ সহ বিভিন্ন আইন-শৃঙ্খলাজনিত ও জনগুরুত্বপূর্ণ কাজ করেছিলাম। তাকে হারিয়ে বাংলাদেশ পুলিশের সবচেয়ে কাছের ও ও বিশ্বস্ত একজন সহকর্মী কে হারালাম। সে হয়তো আমার রক্তের সম্পর্কে ভাই ছিলনা। কিন্তু আমরা পেশাগত কারণে এত কাছে থেকে কাজ করেছি যে, সে আমার ভাইয়ের মতো হয়ে গিয়েছিল।

পরম করুনাময় মহান আল্লাহ পরলোকগত এএসআই পেয়ারুল ইসলামকে জান্নাতবাসি করুক। তার পরিবারের সকলকে হেফাজত করুক। তাদেরকে শোক সইবার শক্তি দান করুক। এএসআই পেয়ারুলের পরিবার ও সন্তান-সন্ততির জন্য পরম করুনাময় মহান আল্লাহতালা উত্তম রিজিকের ব্যবস্থা করুক। তার সন্তানরা যেন মানুষের মতো মানুষ হয় বাবার মত দেশ ও জনগণের সেবায় নিজেদের নিয়োজিত করতে পারে এই দোয়া করি। আমিন।

লেখক- মোঃ ফারুক আহমেদ

সিনিয়র সহকারী পুলিশ সুপার

কালিয়াকৈর সার্কেল, গাজীপুর