সম্বলহীনা পপির স্বপ্নের ‘লেডিস কর্ণার ’

সম্বলহীনা পপির স্বপ্নের ‘লেডিস কর্ণার ’

নুরুন্নবী জুয়েল ♦ `লেডিস কর্ণার' এটি শুধু একটি নবসূচিত দোকানের নাম নয় একজন সহায় সম্বলহীনা নারীর স্বপ্নের নাম।। লালমনিরহাটের সাপটানা বাজারের আদর্শপাড়ায় বসবাস করেন উম্মে কুসলুম পপি।আর দশ জন নারীর মতো তিনিও স্বপ্ন দেখেছিলেন একটি সুন্দর জীবন এর।লেখাপড়া শিখেছিলেন প্রতিষ্ঠিত হবেন বলে।চাকরি করতেন একটি এনজিও তে।

কিন্তু ভাগ্যের নির্মম পরিহাস হয়তো অন্য রকম ভাবে লিখা ছিলো তাই অল্প বয়সেই পিটুইটারি গ্রন্থিতে টিউমার দেখা দেয়, হরমোনাল ইমব্যালেন্স ছড়িয়ে পড়ে সারা শরীরে। সারা শরীর ফুলে যায় অস্বাভাবিক ভাবে। ১৯৯৮ সালের পর আর চাকরি করা সম্ভব হয়নি। তার একটি মেয়ে হয় যে এখন ক্লাস ফাইভ এ পড়ে কিন্তু জন্ম থেকেই মায়ের রোগ বহন করে বড় হচ্ছে সে।অস্বাভাবিক স্থুলতা তার ও।ফলে স্ত্রী সন্তান কে অকুল পাথারে ভাসিয়ে বিবাহবিচ্ছেদ ঘটিয়ে  চলে যায় পপি বেগমের স্বামী। 

চিকিৎসা করে কিছুটা উন্নতি হলেও এখনো গলা ও হাত পা ফোলা সেই সাথে শ্বাসকষ্ট। বেশ কিছু দিন ভাড়া বাসায় থেকে ঘরে বসে টুকটাক সেলাই এর কাজ এবং কাপড় বিক্রি করতেন পপি।  কিন্তু তাতে নিজেদের ভরণ পোষণ দিয়ে ঘর ভাড়া কারেন্ট বিল দেয়া অসাধ্য হয়ে পড়ে সেই সাথে করোনার প্রকোপে তার ব্যাবসার পুজিও আর অবশিষ্ট নেই।সেলাই মেশিন টাও নষ্ট। বাধ্য হয়ে আশ্রয় নেন ভাইয়ের বাসায়।বাবাও স্ট্রোক করে শয্যাসায়ী। আর অসুস্থ মা মেয়ে ভাইয়ের বাসায় ছোট্ট একটা কুঠিরে কোনো রকম বেচে আছেন যা ভাষায় প্রকাশ করা সত্যিই কষ্টসাধ্য।

মা মেয়ের এই করুণ জীবন-যাপনের কথা শুনে এগিয়ে আসে তরুণ-তরুণীদের পরিচালিত স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন "শুনতে কি পাও??" যারা দেশব্যাপি বিভিন্ন প্রত্যন্ত ও পার্বত্য অঞ্চলের মানুষদের জীবনমান উন্নয়ন তথা শিক্ষা, চিকিৎসা, সাধারণ জ্ঞান,কারিগরি ট্রেনিং ও কর্মসংস্থান উন্নয়ন এ সফলতার সাথে কাজ করে চলেছে। আজ সংগঠন এর পক্ষ থেকে তাদের রংপুর বিভাগীয় প্রতিনিধি মোঃনুরুন্নবী জুয়েল লালমনিরহাটের উদ্দেশ্যে রওয়ানা দিয়ে খুজে বের করি পপি আপাকে। কষ্টের কথা গুলো বলতে গিয়ে বার বার কেদে ফেলছিলেন উম্মে কুলসুম পপি ।

ওনার একটা বাক্য শুনে নিজেও আবেগ আপ্লুত হয়ে গিয়েছিলেন সংগঠন এর সদস্যরা।তিনি বলছিলেন, "ভাই আমার বাচ্চা টা যদি মেয়ে না হয়ে ছেলে হতো আমি রাস্তায় ফুটপাতে গিয়ে থাকতাম"।

 "শুনতে কি পাও??" সংগঠন এর "ঘুরে দাঁড়ানোর গল্প-৭" প্রজেক্ট এর আওতায় একটি কাপড়ের দোকান শুরু করে দেয়া হয়েছে।তার ব্যাবসার জন্য কাপড় সেই সাথে তার চলার জন্য আনুমানিক ১০ দিনের প্রয়োজনীয় খাদ্যসামগ্রী প্রদান  করা হয়।

অনিশ্চিত জীবনে ঘুরে দাড়ানোর এই স্বপ্ন বুনতে পেরে খুশি উম্মে কুলসুম পপি। তিনি জানান,"এই দুনিয়ায় এখনো ভালো মানুষ আছে বলেই হয়তো দুনিয়া টিকে আছে। আমার এই দুর্বিষহ অসহায় জীবনে অনেক আপনজন ই আমাকে দূরে সরিয়ে দিয়েছে কিন্তু এই ভাইয়ারা আমার পাশে এসে দাড়িয়েছে আমার জন্য এত কিছু করলো যাতে আমি খুবই খুশি।দোয়া করি তারা সুস্থ থাকুক, দেশের মানুষের জন্য আরো ভালো কিছু করুক।"

দুইশতাধিক সদস্য নিয়ে দেশ জুড়ে কাজ করে যাচ্ছে "শুনতে কি পাও??" তাদের লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য নিয়ে কথা বলেন সংগঠন এর সভাপতি প্রান্তিক চৌধুরী অর্ঘ্য।তিনি বলেন,"আমাদের মতো যুব সমাজ দেশের মেরুদণ্ড। আমরা যাতে ভুল পথে নিজেদের ভবিষ্যত কে নষ্ট না করে উপরন্ত সমাজের কল্যাণে কিছু টা অবদান রাখতে পারি তারই লক্ষ্য নিয়ে আমাদের এই পথচলা।আমাদের আশেপাশে খুজলে এমন অনেক অসহায় মানুষ পাওয়া যাবে যারা একটু সহযোগীতা পেলে নিজেদের এগিয়ে নিতে পারেন।আর এই মানুষ গুলো কে এগিয়ে যেতে সাহায্য করা ই আমাদের মুল লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য। "

এমন অনেক পপি আপা মানবেতর জীবনযাপন করছেন আমাদের আশেপাশে যাদের খোজ রাখার মতো সময় আমাদের হয়ে ওঠে না। কিন্তু আমাদের কি কোনো দায়িত্ব নেই তাদের প্রতি?

এমন হাজারো মানুষের মুখে হাসি ফোটানোর প্রত্যাশা নিয়ে এগিয়ে চলেছে স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন "শুনতে কি পাও??" মানবিকতার তাগিদে মানুষের পাশে।
 

লেখক- স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনের সংগঠক, রংপুর