আপন ঠিকানা খুঁজে পেল রিতু | Rangpur | Newsdoor

শীতের ঋতুতে বিয়ের ফুল ফুটলো এতিম রিতু’র। প্রতিবন্ধী মা আলেয়া বেগমের (৫৫) উপার্জনে ৩ বেলা খাদ্যের যোগান দেয়াই ছিল দুস্কর। এর মধ্যে সুপাত্রস্থ করা যেন আলেয়া বেগমের কাছে দুঃসাধ্য কাজ। তার উপর ঘটা করে মেয়ের বিয়ে তো অধরা স্বপ্ন ছিল তার। আলেয়া বেগমের অধরা এই স্বপ্নকে বাস্তবায়ন করেছে ফজিলা কালাম ফাউন্ডেশন। নগরীর রঘু বাজার ৩৩নং ওয়ার্ড কাউন্সিলর কার্যালয়ে ব্যাপক আয়োজনের মধ্য দিয়ে ঘটা করে এতিম মেয়ের বিয়ের আয়োজন করে এ সংগঠনটি। এতে অংশ নিয়েছেন প্রশাসনের উর্ধ্বতন কর্তা ব্যক্তি, জনপ্রতিনিধিসহ এলাকার গণমাণ্য ব্যক্তিরা। দেখে বুঝবার উপায় নেই এতিম মেয়ের বিয়ে। যেন জমকালো আয়োজনে আপন ঠিকানা খুঁজে পেল এতিম রিতু। জানা যায়, রংপুর নগরীর ৩৩নং ওয়ার্ডের তালুক রঘু বগুড়া পাড়ার গামেন্টস্ কর্মী আব্দুল মতিন মিয়া ও আলেয়া বেগম দম্পতির ৭ সন্তানের মধ্যে ৫ ছেলে ও দুই মেয়ে। ২০১৮ সালে ঢাকায় মস্তিস্কে রক্তক্ষরণ হয়ে মতিন মিয়া মারা যান। এরপর থেকে আলেয়া বেগমের সংসারে নেমে আসে অভাব ও অনটন। এলাকাবাসীর সহযোগিতায় কোন রকমে বড় মেয়েকে বিয়ে দেন আলেয়া বেগম। এরপর মায়ের সাথে যোগাযোগ ছিন্ন করে বড় দু’ছেলে গার্মেন্টস্ কর্মী বিয়ে করে ঢাকায় বসবাস শুরু করেন। এতে করে ছোট মেয়ে ও দু’ছেলেকে নিয়ে বিপাকে পড়েন আলেয়া বেগম। পা দিয়ে খুড়িয়ে খুড়িয়ে হেটে মানুষের বাড়িতে গৃহপরিচারিকার কাজ করে কোন রকম দিন পাড় করছিলেন তিনি। এরই মধ্যে ছোট মেয়ে রিতু আক্তার বিবাহযোগ্য হয়ে পড়লে আরও চিন্তিত হয়ে পড়েন আলেয়া বেগম। এমন পরিস্থিতিতে সংবাদ পেয়ে আলেয়া বেগমের পরিবারের পাশে দাঁড়ায় ফজিলা কালাম ফাউন্ডেশন। রংপুরের ব্যবসায়ী মোঃ ফজলুল হক মিলন ও তার আমেরিকায় থাকা ছোট ভাই মোঃ সোলায়মান মিয়া ২০১০ সাল থেকে বিভিন্ন সমাজ সেবামূলক কাজ করে আসছেন। ২০২০ সালের শুরুর দিকে তারা মা-বাবা’র নামে গঠন করেন ফজিলা কালাম ফাউন্ডেশন। এই সংগঠনের উদ্যোগে রিতু আক্তারের সাথে মিঠাপুকুর শালমারা বাজার খোর্দ্দ নারায়নপুরের কৃষক আব্দুল হালিম মিয়ার ছেলে শ্রমিক মোঃ নিয়ামুল মিয়া’র ঘটা করে বিয়ে দেয়া হয়। রঘু বাজার ৩৩নং ওয়ার্ড কাউন্সিলর কার্যালয়ে অনুষ্ঠিত বিয়ের আয়োজনে আলোক সজ্জা, বর-বধুকে সাজানো, সংসারের বিভিন্ন আসবাবপত্র প্রদান, ৩ শতাধিক ব্যক্তির খাওয়া’র আয়োজন, আত্মনির্ভরশীলতা অর্জনের জন্য গরু-ছাগল, হাঁস-মুরগি প্রদানসহ বর-বধু’র হাতে তুলে দেয়া হয় নগদ ৩০ হাজার টাকা ও ১০ হাজার টাকার প্রাইজবন্ড। কনেকে বিদায় করা হয় পালকি দিয়ে। এদিকে বিয়ের আয়োজনে অংশ নেন, রংপুর সিটি মেয়র মোস্তাফিজার রহমান মোস্তফা, পুলিশ সুপার বিপ্লব কুমার সরকার, অতিরিক্ত পুলিশ সুপার আবু তৈয়ব মোঃ আরিফ হোসেন, মেট্রোপলিটন পুলিশের সহকারী পুলিশ কমিশনার আল ইমরান হোসেন, মাহিগঞ্জ থানার ওসি শেখ রোকনুজ্জামান, জেলা প্রশাসনের প্রতিনিধি, মহানগর আওয়ামী লীগের সভাপতি সাফিউর রহমান সফি, সাধারণ সম্পাদক তুষার কান্তি মন্ডল, ৩৩নং ওয়ার্ড কাউন্সিলর সিরাজুল ইসলামসহ বিশিষ্ট ব্যক্তিরা।