রংপুরে ঝড়-শিলাবৃষ্টিতে ফসলের ব্যাপক ক্ষতি

বৃষ্টির পানির চেয়ে শিলার তোপে মাটিতে নুযে পড়েছে কৃষকের সবুজ খেত

রংপুরে ঝড়-শিলাবৃষ্টিতে ফসলের ব্যাপক ক্ষতি

স্টাফ রিপোর্টার ♦ রংপুরে কালবৈশাখী ঝড় আর শিলা বৃষ্টিতে হাঁড়িভাঙ্গা আম, ভুট্টা, গম, ধান,পাট সহ উঠতি ফসলের ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। কোথাও কোথাও শিলার আঘাতে ঘর-বাড়ির ক্ষতির পাশাপাশি ঝড়ে উপড়ে গেছে স্থাপনা। তবে বৃষ্টির পানির চেয়ে শিলার তোপে মাটিতে নুযে পড়েছে কৃষকের সবুজ খেত।
মঙ্গলবার রাত ১২টার পর থেকে থেমে থেমে কালবৈশাখী ঝড় ও শিলা বৃষ্টি আঘাত হানে। বদরগঞ্জে শিলাবৃষ্টিতে হাঁড়িভাঙা আম, পাকা ধানসহ উঠতি ফসলের ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। এ সময় ২০ থেকে ৩০ গ্রাম ওজনের একেকটি শিলার আঘাতে শত শত টিনের ঘর ক্ষতিগ্রস্ত হয়।মঙ্গলবার  সকাল ১০টার দিকে আধ ঘণ্টারও বেশি সময় ধরে শিলাবৃষ্টি হয়। এতে উপজেলার লোহানিপাড়া, মন্ডলপাড়া ও ট্যাকসেরহাটে বেশি ক্ষতি হয়েছে। মঙ্গলবার রাত ১২টার পর থেকে হঠাৎ কালো মেঘে আচ্ছন্ন হয় আকাশ। এর কিছুক্ষণ পর থেমে থেমে শুরু হয় ঝোড়ো হাওয়া। তবে মধ্যরাত থেকে জেলার বিভিন্ন স্থানে বৈশাখী ঝড়ের সঙ্গে শিলা বৃষ্টি শুরু হয়। বৃষ্টিতে পানির পরিমাণ কম হলেও প্রচুর শিলা ঝরেছে। শিলা বৃষ্টিতে কোথাও কোথাও শিলার স্তূপ জমে যায়। তবে বৃষ্টির চেয়ে দমকা ও ঝোড়ো হাওয়া বেশিক্ষণ স্থায়ী ছিল বলে জানা গেছে।
রংপুর নগরীরসহ সদর উপজেলা, মিঠাপুকুর, পীরগঞ্জ, বদরগঞ্জ, তারাগঞ্জ, পীরগাছা, গঙ্গাচড়া ও কাউনিয়া উপজেলায় খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, ঝাড়ো হাওয়ার সঙ্গে ব্যাপক শিলা বৃষ্টি হয়েছে। রাত থেকে সকাল পর্যন্ত কয়েক ধাপে থেমে থেমে চলা বৃষ্টিতে ফসলি খেত ছাড়াও ঘর-বাড়ি,কলারগাছ ও গাছগাছালির ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। হঠাৎ এমন ঝোড়ো হাওয়া ও শিলা বৃষ্টিতে ধান, ভুট্টা, মিষ্টি কুমড়া, বাদাম, আলুসহ শাক-সবজির ক্ষতির পরিমাণ বেশি হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে বলে মনে করছেন কৃষকরা।
বদরগঞ্জ উপজেলা সদরের আশপাশের বেশ কয়েকটি গ্রামের প্রায় কয়েকশ বিঘা জমির ধানসহ অন্যান্য ফসলের ক্ষতি হয়েছে। ক্ষতিগ্রস্ত চাষিরা জানান, ধানের গাছ এখন বেশ বাড়ন্ত। ধানও গজাতে শুরু করেছে। কিছু দিন পরই বেরো কাটা হতো। কিন্তু মঙ্গলবার এবং বুধবারের ঝড়-বৃষ্টিতে অনেক জায়গায় ধান এখন মাটিতে হেলে পড়েছে। তবে শাক-সবজি ও উঠতি ফসলের ক্ষতি বেশি হয়েছে।

মিঠাপুকুর উপজেলার রানীপুকুর এলাকার কৃষক আমজাদ হোসেন জানান, কিছু দিন আগে কাঁকরোলের খেত পরিচর্যা করেছেন। কাঁকরোলগাছ সবেমাত্র বঢ় হচ্ছিল। কিন্তু রাতের শিলা বৃষ্টি আর ঝড়ে খেতের উঠতি গাছগুলো নষ্ট হয়ে গেছে। শাক-সবজির পাশাপাশি ভুট্টার ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। তিনি আরও জানান, তার খেতের পাশের জমিতে সেচ মেশিনের ঘরটিও ঝড়ে উড়ে গেছে। গ্রামের অনেক বাড়ির পুরানো ঘরের টিনগুলো শিলা বৃষ্টিতে ফুটো হয়ে গেছে।
উপজেলার ট্যাকসেরহাট গ্রামের কৃষক আতিয়ার রহমান জানান, হঠাৎ শিলাবৃষ্টিতে ধানসহ উঠতি ফসলের ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। এ বছর আমাদের খুবই সমস্যায় পড়তে হবে।একই এলাকার বাসিন্দা আবুল হোসেন বলেন, এমন শিলাবৃষ্টি এর আগে কখনো দেখেনি এলাকার লোকজন। বাড়ির উঠান ও সড়কের ওপর শিলার স্তুূপ জমে ছিল। প্রায় ৩০ গ্রাম ওজনের একেকটি শিলার আঘাতে টিনের ঘরের চাল এমনভাবে ঝাঁঝরা হয়েছে যে, সেসব ঘরে এখন থাকাই অসম্ভব।
লোহানিপাড়ার এলাকার কৃষক সবুজ মিয়া বলেন, বদরগঞ্জ উপজেলা হাঁড়িভাঙা আমের জন্য বিখ্যাত। সব গাছে আমের গুটি এসেছিল। কিন্তু হঠাৎ শিলাবৃষ্টিতে আমের ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে।
রংপুর আবহাওয়া অফিসের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা একেএম কামরুল হাসান জানান, মঙ্গলবার সকাল ৯টা থেকে বুধবার সকাল ৯টা পর্যন্ত জেলার বিভিন্ন স্থানসহ প্রত্যন্ত এলাকাতে ঝড় ও শিলা বৃষ্টি হয়েছে। এতে গেল ২৪ ঘণ্টায় ৬৩ দশমিক শূন্য তিন মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়েছে। এর মধ্যে রাত ১২টার পর থেকে রাত ৩টা পর্যন্ত ৬ মিলিমিটার এবং রাত ৩টার পর থেকে ভোর ৬টা পর্যন্ত থেকে ৫৬ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়েছে। এরপর ভোর ৬টা থেকে সকাল ৯টা পর্যন্ত ৩ দশমিক শূন্য ৩ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত হয়েছে।
রংপুর কৃষি সমপ্রসারণ অধিদপ্তরের উপ পরিচালক কৃষিবিদ মো: ওবায়দুর রহমান মন্ডল জানান  মঙ্গলবারে কালবৈশাখী ঝড়ে ১০ দশমিক ১০ হেক্টর জমির ফসলের ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে ।তিনি জানান ঝড় আর শিলা বৃষ্টিতে হাঁড়িভাঙ্গা আম, ভুট্টা, গম, ধান,পাট সহ উঠতি ফসলের ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। কোথাও কোথাও শিলার আঘাতে ঘর-বাড়ির ক্ষতির পাশাপাশি ঝড়ে উপড়ে গেছে স্থাপনা। তবে বৃষ্টির পানির চেয়ে শিলার তোপে মাটিতে নুযে পড়েছে কৃষকের সবুজ খেত।
রংপুরের জেলা প্রশাসক আসিব আহসান জানান, মঙ্গলবার সকালে এবং বুধবার মধ্যরাতে জেলার বিভিন্ন স্থানে ঝড়ো বাতাশ ও শিলা বৃষ্টি হয়েছে। ক্ষয়ক্ষতির কোনো তথ্য এখনো পাওয়া যায়নি। তবে ক্ষয়ক্ষতি হয়ে থাকলে তা যাচাই-বাছাই করে সহযোগিতা করা হবে।