রংপুর মিঠাপুকুরে পিকআপ ভর্তি ভেজাল গুড় আটক

রংপুর মিঠাপুকুরে পিকআপ ভর্তি ভেজাল গুড় আটক

হাবীবুর রহমান সোনা, মিঠাপুকুর (রংপুর) ♦  রংপুরের মিঠাপুকুরে বিপুল পরিমাণ ভেজাল গুড়সহ একটি পিকআপ ভ্যান আটক করেন এলাকাবাসি। দিনভর স্থানীয় গ্রামপুলিশ পাহারা দিয়ে রাখলেও পুলিশ ঘটনাস্থলে যায়নি। পরে তারা রাতে ভেজালগুড়সহ পিকআপটি থানায় নিয়ে আসলেও পুলিশ মামলা নেয়নি বলে অভিযোগ করেছেন এলাকাবাসি। শুক্রবার রাতে এ ঘটনা ঘটে।

এলাকাবাসি ও গ্রামপুলিশ সূত্রে জানা গেছে, উপজেলার ময়েনপুর ইউনিয়নের গেনারপাড়া গ্রামের গুড় ব্যবসায়ী আকতারুল ইসলাম দীর্ঘদিন ধরে ভেজাল গুড় তৈরী করে আসছেন। এলাকাবাসির অভিযোগ- তিনি বাড়িতে গুড় তৈরীর কারখানা স্থাপন করেছেন। সেখানে পাথরী চুন, ময়দা, স্যাকারিন, চিনি, গো খাদ্য হিসেবে ব্যবহৃত গুড়ের নালি ও রং মিশিয়ে নকল গুড় তৈরী করে আসছেন। এই এলাকায় এ ধরনের আরও ৭ টি নকলগুড় তৈরী কারখানা রয়েছে। শুক্রবার দুপুরে আক্তারুল ইসলামের কারখানা থেকে একটি পিকআপে করে বিপুল পরিমাণ ভেজাল গুড় অন্যত্র নিয়ে যাওয়া হচ্ছিল। খবর পেয়ে স্থানীয় জনতার সহায়তায় কয়েকজন গ্রাম পুলিশ শুকুরেরহাটে পেট্রোল পাম্পের কাছে ওই পিকআপটি আটক করে।

বিষয়টি জানার পর ময়েনপুর ইউপি চেয়ারম্যান ও সদস্যরা ঘটনাস্থলে যান। পুলিশ প্রশাসনের সহায়তা চেয়ে কোন কাজ হয়নি বলে অভিযোগ করেছেন এলাকাবাসি। সাবেক ইউপি সদস্য শফিকুল ইসলাম বলেন, প্রকাশ্যভাবে আক্তারুল ও তার লোকজন ভেজাল গুড় তৈরী করে বিভিন্নস্থানে সরবরাহ করেন। দীর্ঘদিন ধরে এভাবে চলতে থাকলেও রহস্যজনক কারণে স্থানীয় প্রশাসন কোন পদক্ষেপ নেয়না। মাঝে মাঝে লোক দেখানো অভিযানে আসে কিছু সংস্থার লোকেরা। তবে, কাজের কাজ কিছুই হয়না।’ দির্ঘ সময়েও পুলিশী সহায়তা না পেয়ে এলাকাবাসির মাঝে ক্ষোভের সৃষ্টি হয়।

ময়েনপুর ইউপি চেয়ারম্যান মাহবুবুল হক বলেন, আইনগত ব্যবস্থা গ্রহনের জন্য দিনভর আমি মোবাইলফোনে থানা পুলিশ, ইউএনও এবং এসিল্যান্ডকে জানাই। ভোক্তা অধিকার কর্মকর্তাদেরও জানাই। কিন্তু কেউ কোন পদক্ষেপ নেননি। বিশেষ করে থানা পুলিশকে বারবার অনুরোধ জানালেও তারা ঘটনাস্থলে আসেনি। এলাকায় উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়ে। অপরাধীরা হুমকি দিতে থাকে। আমার পরিষদের নিরস্ত্র গ্রাম পুলিশরা আতঙ্কিত হয়ে পড়েন ।’

দিনভর এভাবে চলার পর ইউএনও’র পরামর্শে অবশেষে রাত ১০টার দিকে চেয়ারম্যান, মেম্বার ও এলাকাবাসি আটক নকল গুড়, ভর্তি পিক-আপ ও চালককে থানায় নিয়ে যান। এসময় থানার ওসি আমিরুজ্জামান নানা অজুহাতে মামলা গ্রহনে অসম্মতি প্রকাশ করেন। এ নিয়ে ওসির কক্ষেই বাক-বিতন্ডা শুরু হয়। পরে এক পর্যায়ে তিনি একটি সাধারন ডায়েরী নেন এবং পরবর্তীতে মামলা করবেন বলে জানান। 

ওসি আমিরুজ্জামান বলেন, ভেজাল নাকি আসল তা তো জানা যায়নি। আর এটা দেখার দায়িত্ব পুলিশের নয়। আপাতত. জিডি করা হয়েছে। গুড়ের নমুনা পরীক্ষার জন্য বিএসটিআইতে পাঠানো হবে। রিপোর্ট আসার পর মামলা হবে।’

উপজেলা নির্বাহী অফিসার (ইউএনও) মো. মামুন ভুঁইয়া বলেন, স্থানীয় ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যানের মাধ্যমে বিষয়টি জানতে পেরেছি। পরে, ঘটনাস্থলে পুলিশ পাঠিয়ে পিকআপসহ ভেজালগুড় আটক করে থানায় নিয়ে আসার জন্য ওসিকে নির্দেশ দিয়েছি।