রংপুরে কবুতর চুরির অপবাদে মাদ্রাসা ছাত্রকে মারপিট

দাঁ দিয়ে মাথায় কোঁপ, পড়েছে ১২টি সেলাই

রংপুরে কবুতর চুরির অপবাদে মাদ্রাসা ছাত্রকে মারপিট
ছবি: নিউজডোর

স্টাফ রিপোর্টার ♦ রংপুরে কবুতর চুরির অপবাদে মাদ্রাসা ছাত্রকে নিমর্মভাবে মারপিট করে রাস্তায় ফেলে দেওয়ার অভিযোগ উঠেছে সাবেক সেনা সদস্য মনছুর আলী’র (৫২) বিরুদ্ধে। মাথাসহ গোটা শরীরে গুরুতর জখম হওয়ায় হাসপাতালের বিছানায় কাতরাচ্ছে ওই ছাত্র। এ ঘটনায় প্রভাবশালী আসামী পক্ষ মামলা তুলে নেওয়ার হুমকি দিচ্ছে। ভয়-ভীতি অব্যহত থাকায় হাসপাতাল থেকে বাড়ি ফিরতে পারছে না ভুক্তভোগী ওই ছাত্রসহ তার পরিবারের সদস্যরা।

এদিকে মামলার পর থেকে গাঢাকা দিয়েছে অভিযুক্ত মনছুর আলী। মামলা সূত্রে জানা যায়, রংপুর নগরীর ধাপ সর্দারপাড়া গ্রামের শরিফুল ইসলামের ছেলে সিমান্ত (১৩) হাজীপাড়া মাদ্রাসার নুরানী বিভাগে লেখাপড়া করে। গত ১২ আগস্ট রাত ৮টার দিকে সিমান্ত তার বন্ধুদের নিয়ে ধাপ হাজীপাড়ার মনছুর আলীর বাড়ির রাস্তা অতিক্রম করছিল। এ সময় কবুতর চোরের অপবাদ দিয়ে সিমান্তসহ তার বন্ধুদের ধাওয়া করে মনছুর। এতে সিমান্তের অন্য বন্ধুরা ভয়ে দৌড়ে পালিয়ে গেলেও সে হতবাক হয়ে দাঁড়িয়ে থাকে। অবসরপ্রাপ্ত সেনা সদস্য মনছুর আলী সিমান্তকে পেয়ে পাঞ্জাকোলা করে বাড়ির ভেতরে নিয়ে গিয়ে গাছের শুকনা ডাল, লোহার চেইন দিয়ে এলোপাথাড়ি আঘাত করে তাকে রক্তাত্ব করে। মারপিটের এক পর্যায়ে সিমান্তের মাথায় দা দিয়ে কোপ মারে মনছুর। এতে সিমান্ত অজ্ঞান হয়ে মাটিতে লুটিয়ে পড়ে। এ সময় মনছুর সিমান্তকে মৃত ভেবে টেনে হেঁচরে বাড়ির সামনের রাস্তায় ফেলে রেখে যায়। পথচারীরা সিমান্তকে রক্তাত্ব অবস্থায় দেখে মনছুরকে আটকের চেষ্টা করে।

খবর পেয়ে সিমান্তের নানী শিরিন বেগম ঘটনাস্থলে উপস্থিত হয়ে সিমান্তকে উদ্ধার করে রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করে। বর্তমানে সিমান্ত হাসপাতালের সার্জারী বিভাগে চিকিৎসাধীন রয়েছে। এ ঘটনায় ১৩ আগস্ট রাতে সিমান্তের মা পিংকি বেগম বাদী হয়ে রংপুর মেট্রোপলিটন কোতয়ালী থানায় মামলা দায়ের করেছে।

হাসপাতালে সরেজমিনে দেখা যায়, সার্জারী বিভাগের ৯ নম্বর বেডে চিকিৎসা নিচ্ছে সিমান্ত। মাথায় ১২টি সেলাই পড়েছে তার। এছাড়া হাত, পা, পিঠসহ শরীরের বিভিন্ন অংশে মারপিটের দাগ এখনও দেখা যাচ্ছে।

সিমান্তের মা রিংকি বেগম বলেন, কবুতর চুরির অপবাদ দিয়ে আমার নিরাপরাধ ছেলেকে মনছুর ও তার পরিবারের সদস্যরা নির্মমভাবে মারপিট করেছে। সিমান্তের মাথায় আঘাত করে তাকে হত্যার চেষ্টা করা হয়েছে। আমার ছেলের মাথায় ১২টি সেলাই পড়েছে। সারা শরীরে ব্যাথার কারণে সে এখন হাসপাতালের বিছানায় কাতরাচ্ছে এবং ঘুমের মধ্যেও চিৎকার দিয়ে উঠছে। আমি মনছুরের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবী করছি।  

সিমান্তের নানী শিরিন শারমিন বলেন, আমার জামাই চিল্লায় গেছে। আমি আমার মেয়ে-নাতিসহ চরম আতংঙ্কে দিন পাড় করছি। মনছুরেরা মোবাইলে ফোনে মামলা তুলে নেওয়ার জন্য আমাদের হুমকি দিচ্ছে। বাসায় গিয়ে আমরা নিরাপদে থাকতে পারবো না বলে মনে হচ্ছে। আমরা নিরাপত্তা চাই ও আসামী মনছুরের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দাবী করছি।

এ ব্যাপারে রংপুর মেট্রোপলিটন কোতয়ালী থানার ওসি মাহফুজার রহমান বলেন, এ ঘটনায় থানায় একটি মামলা হয়েছে। তদন্ত পূর্বক প্রয়োজনীয় আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।