নিখোঁজের ৩০ বছর পর পাকিস্তানে খোঁজ মিলল রংপুরের সুফিয়া বিবির

নিখোঁজের ৩০ বছর পর পাকিস্তানে খোঁজ মিলল রংপুরের সুফিয়া বিবির

স্টাফ রিপোর্টার ♦ নিখোঁজের ৩০ বছর পর খোঁজ মিলল হারিয়ে যাওয়া সুফিয়া বিবির। বর্তমানে তিনি পাকিস্তানের একটি শহরে বসবাস করছেন। তার বাড়ি রংপুরের বদরগঞ্জের মধুপুর ইউনিয়নের নাওপাড়া কাশীগঞ্জ গ্রামে। হারিয়ে যাওয়ার সময় তার বয়স ছিল ২০ থেকে ২১ বছর। এতদিন পরিবারের লোকজন জানতে সুফিয়া মারা গেছেন। গত সোমবার “দেশে ফেরা” নামের একটি ফেসবুক আইডি থেকে সুফিয়ার একটি সাক্ষাৎকার প্রচার করা হয়। পরে সেটি ভাইরাল হলে সুফিয়ার আত্মীয়রা সেটি শনাক্ত করেন। 
এলাকাবাসী ও সুফিয়ার স্বজনদের সূত্রে জানা যায়, বদরগঞ্জের ওপর দিয়ে বয়ে চলা যমুনেশ্বরী নদীর পাশের কাশীগঞ্জ নামে একটি ছোট গ্রামের চাঁন মাসুদ ও শরিতন নেছার সংসারে জন্ম সুফিয়া বিবির। ১৮ বছর বয়সে পাশের দামোদরপুর ইউনিয়নের সৌলারপাড় গ্রামের ওমর উদ্দিনের সাথে বিয়ে হয় সুফিয়ার। তাদের সংসারে জন্ম হয় দুই সন্তানের। সুফিয়ার স্বামী ও এক কন্যার মৃত্যু হয়। পারিবারিক মনমালিন্যের কারণে বাড়ি থেকে নিঁখোজ হন সুফিয়া। অনেক খোঁজাখুজির পরও পাওয়া যায়নি সুফিয়াকে। এক পর্যায়ে হাল ছেড়ে দেন সুফিয়ার পরিবারের লোকজন ও আত্মীয়-স্বজন। সবাই ধরে নেয় সুফিয়ার আর বেঁেচ নেই। 
নিভে যাওয়া প্রদীপ জ্বালিয়ে সুফিয়ার খোঁজ দিয়েছে “দেশে ফেরা” নামে একটি একটি স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনের ফেসবুক আইডি। গত সোমবার (১৫ এপ্রিল) সংগঠনটির ফেসবুক আইডি থেকে একটি ভিডিও প্রকাশ করা হয়।  ভিডিওতে দেখা যায় একজন মহিলা বাড়িতে ফেরা নিয়ে তার আকুতি প্রকাশ করেন। ভিডিওতে তিনি বলেন, তার বাড়ি বাংলাদেশে এবং তার নাম সুফিয়া বিবি। বাবার নাম চান মিয়া, ভাই সহিদার রহমান, বোন রোসনা বেগম ও নুর জাহান। বাড়ি বাংলাদেশের রংপুর জেলার বদরগঞ্জ উপজেলায়। গ্রামের নাম নাওপাড়া কাশীগঞ্জ। 
ভিডিওটি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে প্রচার হলে ব্যাপক ভাইরাল হয় এবং সুফিয়া বিবির আত্মীয়-স্বজনের নজরেও পড়ে। পরে যোগাযোগ করা হয় দেশে ফেরা সংগঠনটির সদস্যদের সাথে। তারাও সুফিয়ার স্বজনদের সঙ্গে কথা বলে পরিচয় সম্পর্কে নিশ্চিত হন। বুধবার (১৭ এপ্রিল) বিকেল ৪টায় পাকিস্তান থেকে বদরগঞ্জের গ্রামের বাড়িতে সুফিয়ার সঙ্গে তার আত্মীয়-স্বজনদের ভিডিও কনফারেন্সিংয়ের মাধ্যমে কথা বলার ব্যবস্থা করে দেয়া হয়।
সুফিয়া বিবির ভাতিজা মেনহাজুল ইসলাম বলেন, যখন ফুফু হারিয়ে যায় তখন আমার বয়স মাত্র ১০ বছর। তবুও তার সাথে আমার শৈশবের স্মৃতিগুলো মনে পড়লে চোখের পানি ধরে রাখতে পারতাম না। আমরা সবাই ধরেই নিয়েছিলাম তিনি মারা গেছেন। এখন তার খোঁজ মিলেছে। তাকে আবার দেখতে পারবো। এই অনুভ‚তি অন্যরকম।
দেশে ফেরা সংগঠনের সদস্য তানভীর হাসান বলেন, “পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে সদস্য নিয়ে আমাদের “দেশে ফেরা” সামাজিক সংগঠনের মাধ্যমে এক দেশ থেকে অন্যদেশে নিখোঁজ কিংবা পাচার হয়ে যাওয়া মানুষদের তাদের বাসায় ও আপনজনদের কাছে ফিরিয়ে দিতে কাজ করে যাচ্ছি। সংগঠনের মাধ্যমে এ পর্যন্ত ভারত, পাকিস্তানসহ বিভিন্ন দেশ থেকে হারিয়ে ১১৬ জনকে আমরা তাদের আপনজনদের কাছে ফিরিয়ে দিতে সফল হয়েছি। সুফিয়া বিবিকেও আমরা পাকিস্তানে পেয়েছি। এখন সুফিয়ার পরিবারের লোকজন চাইলে দুই দেশের দূতাবাসের মাধ্যমে তাকে ফেরত নিতে পারবে।
মধুপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান নুর আলম ভুট্টু বলেন, বিষয়টি শুনে আমিও আনন্দিত হয়েছি। আমরাও চাই সুফিয়া দ্রæত ফিরে আসুক। সুফিয়ার পরিবারের লোকজন তাকে ফিরিয়ে আনতে ইউনিয়ন পরিষদ থেকে যা যা সহায়তা চাইবে, আমরা দিতে প্রস্তুত রয়েছি।