মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রীর বিরুদ্ধে মানহানী মামলার প্রস্তুতি  ভাষা সৈনিক, মুক্তিযোদ্ধার

মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রীর বিরুদ্ধে মানহানী মামলার প্রস্তুতি  ভাষা সৈনিক, মুক্তিযোদ্ধার

মেরিনা লাভলী ♦ প্রকৃত মুক্তিযোদ্ধা ও মুক্তিযুদ্ধের সংগঠকদের নামে যাচাই-বাছাই নোটিশ দেয়ায় বিক্ষুদ্ধ হয়ে উঠেছে রংপুরের মুক্তিযোদ্ধারা। এ ঘটনায় মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রী আকম মোজাম্মেল হকের বিরুদ্ধে মানহানী মামলা দায়েরের সিদ্ধান্ত নিয়েছে ভাষা সৈনিক, বীর মুক্তিযোদ্ধা, মুক্তিযুদ্ধের সংগঠক ও প্রশিক্ষক মজিবর রহমান মাস্টার।

রোববার দুপুরে রংপুর প্রেসক্লাবে সাবেক জেলা কমান্ডার বীর মুক্তিযোদ্ধা মোহাম্মদ মোজাফ্ফর হোসেন চাঁদ ৯ দফা দাবী তুলে সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্যে বলেন, মুক্তিযুদ্ধের ৪৯ বছর অতিবাহিত হলেও মুক্তিযুদ্ধে আত্মত্যাগী মুক্তিযোদ্ধাগণ পরিচয়হীন ও অস্থায়ী হিসেবেই রয়ে গেছে। আর এরই মধ্যে চলছে তালিকা তালিকা খেলা। মুক্তিযুদ্ধের সেক্টর কমান্ডারদের মতে মুক্তিযোদ্ধার সংখ্যা প্রায় এক লাখ ৩৩ হাজারের মত। এই সংখ্যা শিল্পী, কলা-কুশলী, খেলোয়াড়, সাংবাদিক , মুজিবনগর সরকারের কর্মচারীসহ সর্বমোট দেড় লাখের উর্ধ্বে হতে পারে না। তা আজ ২ লাখ ৩৮ হাজারে পরিণত হয়েছে এবং প্রক্রিয়া চলমান আছে। ১৯৭৪ সালে ভারত থেকে প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত মুক্তিযোদ্ধাদের তালিকা দেশে আনলেও তা দীর্ঘদিন অযত্ন ও অবহেলায় ফেলে রেখে ১০ বছর পর কল্যাণ ট্রাস্টে হস্তান্তর করা হয়েছিল যা তৎকালীণ কল্যাণ ট্রাস্টের এমডি আমিন আহমেদ চৌধুরী সাহেব নষ্ট হওয়া তালিকা থেকে এফএফ এর প্রায় ৭০ হাজারের মত তালিকা প্রকাশ করেছেন। 

তিনি আরও বলেন, মুক্তিযোদ্ধা সংসদ কেন্দ্রীয় কমান্ড কাউন্সিল ও মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রণালয়ে হাজার হাজার ভূয়া মুক্তিযোদ্ধার বিরুদ্ধে অভিযোগ থাকলেও তা আমলে না নিয়ে ও তদন্ত না করেই বঙ্গবন্ধু সজ্ঞায় অস্ত্র পাচার করে জামুকা নামক সংগঠনের আইনের মাধ্যমে মুক্তিযোদ্ধা তৈরী চলমান রয়েছে। যা অর্থ ও ক্ষমতার বদৌলতে যে কেউ মুক্তিযোদ্ধা হতে পারে। 

সংবাদ সম্মেলনে ভাষা সৈনিক, বীর মুক্তিযোদ্ধা, মুক্তিযুদ্ধের সংগঠক ও প্রশিক্ষক মজিবর রহমান মাস্টার আক্ষেপ করে বলেন, জীবনের এই সন্ধ্যা বেলায় আমাকে নোটিশ করে যাচাই-বাছাইয়ের তালিকায় আনা হয়েছে। আমি ভূয়া মুক্তিযোদ্ধা কি না তা যাচাই-বাছাই হবে। মহান মুক্তিযুদ্ধে যে ত্যাগ স্বীকার করে মুক্তিযুদ্ধ করে দেশকে স্বাধীন করেছি, সেই দেশের মন্ত্রী এখন আমি মুক্তিযোদ্ধা কি না তা যাচাই বাছাই করবে। যা ৯০ বছর বয়সে আমার জন্য লজ্জাজনক ব্যাপার। আমি হাসির পাত্র হয়ে গেছি। রংপুর সদরে ৭৬ জন, বদরগঞ্জে ৩৬ জনসহ জেলায় অনেক প্রকৃত মুক্তিযোদ্ধা ও সংগঠকের নামে যাচাই-বাছাইয়ের জন্য নোটিশ দেয়া হয়েছে। ভূয়া মুক্তিযোদ্ধা চিহ্নিত করে তালিকা থেকে বাদ না দিয়ে আমাদের মত প্রকৃত মুক্তিযোদ্ধাদের নোটিশ দেয়ায় তীব্র নিন্দা জ্ঞাপন করছি। সেই সাথে আমি মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রীর বিরুদ্ধে মানহানী মামলা করবো। 

সংবাদ সম্মেলনে উত্থাপিত ৯ দফা দাবীর মধ্যে রয়েছে, জাতীয় যাদুঘর ও মুক্তিযোদ্ধা কল্যান ট্রাস্টের রক্ষিত তালিকার স্বীকৃতি দিয়ে মুক্তিযোদ্ধাদের স্থায়ী সনদ দিতে হবে, মুক্তিযুদ্ধ ও মুক্তিযোদ্ধা শব্দদ্বয়ের সাংবিধানিক স্বীকৃতি দিতে হবে, মুক্তিবার্তা (লাল বহি)সহ সকল সামরিক-বেসামরিক গেজেট জাতীয় সংসদ অথবা মন্ত্রী পরিষদে বাতিল করে মুক্তিযোদ্ধা সুরক্ষা আইন করতে হবে, সরকারী চাকুরীসহ সকল উন্নয়নমূলক কর্মকান্ডে বঙ্গবন্ধুর দেয়া শতকরা ৩০ ভাগ কোটা বহাল রাখতে হবে, বীর মুক্তিযোদ্ধাদের কলংকিত করার দায়ে জাতীয় মুক্তিযোদ্ধা কাউন্সিল বাতিল করতে হবে, বঙ্গবন্ধুর সংজ্ঞা সমন্বিত রেখে আমলা নির্ভর সকল সংজ্ঞা বাতিল করতে হবে, মহান মুক্তিযুদ্ধে অবদানের জন্য নিজ নিজ কর্মের ভিত্তিতে সম্মানিত করতে হবে, মুক্তিযোদ্ধা কল্যাণ ট্রাস্টের বেহাত হওয়া সম্পদ উদ্ধার এবং লোপাটকারীদের আইনের আওতায় আনতে হবে, মুক্তিযোদ্ধাদের জন্য চিকিৎসা ভাতার টাকা মেডিকেলে না দিয়ে মুক্তিযোদ্ধাদের নিজ নিজ ব্যাংক হিসাবে প্রদান করার জোর দাবী জানানো হয়।

সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন, ৬নং সেক্টরের মুক্তিযোদ্ধা, মুজিবনগর সরকারের কর্মচারী মোঃ আজাদুল ইসলাম, বীর মুক্তিযোদ্ধা মোঃ ইয়াছিন টুনুসহ অন্যরা।