রংপুরে হত্যা মামলার তদন্ত ছাড়াই পুলিশের অভিযোগপত্র দাখিলের অভিযোগ 

রংপুরে হত্যা মামলার তদন্ত ছাড়াই পুলিশের অভিযোগপত্র দাখিলের অভিযোগ 


স্টাফ রিপোর্টার.♦ রংপুরে পুলিশের বিরুদ্ধে হত্যা মামলার তদন্ত ছাড়াই অভিযোগপত্র আদালতে দাখিল করার অভিযোগ পাওয়া গেছে। 

ভিকটিমের মেয়ের অপর একটি হত্যা মামলা ও পুলিশের দাখিল করা অভিযোগপত্র এক সঙ্গে তদন্ত করতে পিবিআই’কে নির্দেশ দিয়েছে আদালত এমন আভাস মিলেছে আইনজীবীদের বক্তব্যে। 


জানা গেছে, রংপুর নগরীর মুলাটোল হকের গলি এলাকার বাসিন্দা সরকারি চাকরিজীবী (অবঃ) আরজুমান্দ বানু ওরফে মিনু গত ১৯ মে দিবাগত রাতে নৃশংসভাবে খুন হয়। খুনের ঘটনায় ভিকটিমের একমাত্র মেয়ের পরিবর্তে তার তালাকপ্রাপ্তা স্বামী মোহনকে অজ্ঞাত কারণে আসামী না করে উল্টো বাদি উল্লেখ করে মামলা দায়ের করে। বিষয়টি নিয়ে বিভিন্ন মহল ও এলাকায় বেশ আলোচনা-সমালোচনার জন্ম দেয়। কোন অদৃশ্য শক্তিতে খুন হওয়া বৃদ্ধাকে শাশুড়ী ও ভিকটিমের মেয়েকে স্ত্রী পরিচয় দিয়ে গত ১৯ মে দায়ের করা হত্যা মামলার এজাহারে বাদী হলেন মোহন, তা নিয়ে খোদ জল্পনা-কল্পনার অন্ত নেই।


এদিকে, ভিকটিমের মেয়ের ঢাকায় চাকরির সুবাদে এবং করোনার লকডাউন চলার সুযোগকে কাজে লাগিয়েছে প্রভাবশালী একটি চক্র। ভিকটিম বারং বার পুলিশকে মামলার এজাহারকারি হওয়ার জন্য অনুরোধ জানালেও কর্তৃপক্ষ তার অনুনয়-বিনয় কোন কিছুতেই সাড়া দেয়নি পুলিশ কর্তারা এমন অভিযোগও রয়েছে মামলার বাদীর। এরপরেও মোহন স্থানীয় প্রভাব খাটিয়ে পরিকল্পিতভাবে হত্যাকান্ডের ঘটনাটিকে ভিন্নখাতে চালিয়ে দিতে পুলিশকে হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার করছেন। মামলায় মোহনকে আসামী না করে উল্টো আরমান আলী নামের একজনকে পুলিশ গ্রেফতার দেখায়। থানায় মায়েরকৃত মামলার বাদী এনায়েত হোসেন মোহনের বিরুদ্ধে ডির্ভোস দেয়া স্ত্রীকে বিভিন্ন সময়-অসময়ে মেয়েকে হুমকি দেয়ার অভিযোগে রাজধানীর দুই থানায় পৃথক সাধারন ডায়রী করেন । 


অপরদিকে, ভিকটিমের মেয়ে তানিয়া মাহাজাবিন সুমী গত ১২ আগষ্ট রংপুরের বিজ্ঞ জুডিসিয়াল ম্যাজিষ্ট্রেট কোতয়ালী আমলী আদালতে একটি মামলা দায়ের করেন। যার পিআর নং ৬০/২০২০। দায়ের করা অভিযোগ আদালত আমলে নেয়। আদালতের বিচারক কোতয়ালী থানায় দায়ের করা মামলা তদন্ত এবং আদালতে নালিশকৃত অভিযোগ একই সাথে তদন্ত করে প্রতিবেদন দাখিল করার জন্য থানা পুলিশকে নির্দেশ দিয়েছেন বিজ্ঞ বিচারক। কিন্তু আদালতের এমন নির্দেশ অমান্য করে এক হত্যা মামলার তদন্ত না করে আদালতে অভিযোগপত্র দাখিল করেন। কোতয়ালী থানা পুলিশের দাখিল করা অভিযোগপত্রের নারাজী চেয়ে আদালতে আবেদন করেন ভিকটিমের মেয়ের আইনজীবী। মামলার বাদির আবেদন আমলে নিয়ে শুনানীর দিন ছিল গত ২০ অক্টোবর। ওইদিন আসামীর লোকজন বাদী সুমীর জীবনের ক্ষতি করার চেষ্টাসহ অশালীন কথাবর্তা বলেন। 


এ ঘটনায় ওইদিনই কোতয়ালী থানায় অপর একটি জিডি করেন ভিকটিমের মেয়ে সুমী। এদিকে, ২০ অক্টোবর পুলিশের পরিবর্তে হত্যাকাÐের ঘটনা তদন্ত করার জন্যে পিবিআইকে নির্দেশ দেয়। গতকাল বৃহস্পতিবার ছিল পুলিশের দাখিল করা অভিযোগপত্রের নারাজী ও  একসঙ্গে ২টি মামলার তদন্তভার পিবিআই’কে তদন্তভার দেয়ার আবেদনের শুনানীর দিনক্ষণ। নির্ধারিত সময় অনুযায়ী মামলার বাদী সুমী আদালত প্রাঙ্গন আসা ও আদালতে উপস্থিতি ও সময় আদালত ক্যাম্পাসে পুলিশী নিরাপত্তা চেয়ে গত মঙ্গলবার আরপিএমপি’র পুলিশ কমিশনার বরাবর পুলিশ নিরাপত্তা চেয়ে আবেদন করেন। ওই আবেদন আমলে নিয়ে সিটিএসবি’র মাধ্যমে কোতয়ালী থানা পুলিশকে আবেদনের প্রেক্ষিতে চিঠিও দেয় কর্তৃপক্ষ। কিন্তু থানা পুলিশ কর্তৃপক্ষ পুলিশ প্রহরা দিতেও গড়িমসি করে। 


পরে মামলার বাদী, আইনজীবীসহ সংশ্লিষ্টরা থানা পুলিশের সাথে যোগাযোগ করে। দেরিতে হলেও শেষমেস থানা পুলিশ ৪সদস্য মামলার বাদীর নিরাপত্তা দানে আদালত প্রাঙ্গনে পৌঁছায়। আদালত প্রাঙ্গনে বাদীসহ তার লোকজন দেড়ঘন্টা আগে পৌঁছালেও পুলিশ সদস্যরা আসেন পরে। এনিয়ে মামলার বাদীসহ তার লোকজন ও আইনজীবীদ্বয় নিরাপত্তার শঙ্কা প্রকাশ করেন। সাড়ে ১২টারদিকে বাদীর আবেদনের শুনানী শেষে হত্যার ঘটনায় দায়ের করা ২ মামলার তদন্ত কার্যক্রম শেষ করে তদন্ত প্রতিবেদন দাখিল করতে পিবিআইকে নির্দেশ দেন আদালত, এমন অভিমত প্রকাশ করেন বাদীর আইনজীবী এ্যাডভোকেট আব্দুর রশীদ চৌধুরী ও এ্যাডভোকেট হোসনে আরা লুৎফা ডালিয়া। 


এ ব্যাপারে, শুনানী শেষে আদালতের নির্দেশনায় সন্তোষ প্রকাশ করে এ্যাডভোকেট হোসনে আরা লুৎফা ডালিয়া সাংবাদিকদের বলেন, হত্যাকাÐের ঘটনা ও মামলার তদন্ত না করে পুলিশ চার্জশীট দিয়েছেন। তা উদ্দেশ্য প্রণোদিত, এটি মোটেও কাম্য নয়। তাই আমরা আদালতে ২ মামলার তদন্ত যাতে একসঙ্গে হয়, সেজন্যে আমরা বাদীর পক্ষে আবেদন করেছিলাম। আমাদেও আবেদন শুনানী শেষে আদালত পিবিআইকে তদন্ত করে প্রতিবেদন দাখিল করার নির্দেশ দিয়েছেন।


এ ব্যাপারে গতকাল বৃহস্পতিবার আদালত প্রাঙ্গনে সাংবাদিকদের তানিয়া মাহাজাবিন সুমী বলেন, সঠিক ন্যায্য বিচার পেতে আমি আদালতের সরনাপন্ন হয়েছি। আদালত মামলা আমলে নিয়ে পুলিশের পরিবর্তে পিবিআইকে তদন্তের দায়িত্বভার দিয়েছেন। যেহেতু পুলিশ হত্যা মামলার তদন্ত না করেই চার্জশীট দিয়েছে, তা নারাজী করা হয়েছে। আজ ২ মামলার তদন্ত একসঙ্গে করতে পিবিআইকে নির্দেশ দিলো আদালত। উল্লেখ্য, এনায়েত হোসেন মোহন নগরীর দক্ষিণ মুলাটোল ব্যাংক কলোনী এলাকার বাসিন্দা বেলায়েত হোসেনের ছেলে।