দু:স্থ এতিমদের আধুনিক পরিবেশে প্রতিপালনের আলো ছড়াচ্ছে গঙ্গাচড়ার এতিম ভবন

দু:স্থ এতিমদের আধুনিক পরিবেশে প্রতিপালনের আলো ছড়াচ্ছে গঙ্গাচড়ার এতিম ভবন
ছবি: খোবাইব বিন আদি (রা) উচ্চ বিদ্যালয় ও  ইয়াতিম খানা

গঙ্গাচড়া প্রতিনিধি ♦ সমাজে অবহেলার শিকার দু:স্থ ইয়াতিম শিশুদের আধুনিক পরিবেশে বসবাস এবং শিক্ষাদানের মাধ্যমে উচ্চ শিক্ষিত করে কর্মসংস্থানমুখী করতে এবার ইয়াতিম ভবন নির্মাণ হলো রংপুরের গঙ্গাচড়ার নিভৃত গ্রাম কচুয়ায় অবস্থিত খোবাইব বিন আদি (রা) উচ্চ বিদ্যালয় ও  ইয়াতিম খানায়। 
বর্তমানে প্রতিষ্ঠানটি থেকে ৪১ জন এতিম শিশু মাধ্যমিক পাশ করার পর দেশের বিভিন্ন সরকারি বেসরকারি বিশ্¦বিদ্যালয়ে পড়ালেখা করছে। এছাড়াও প্রায় ৭০ জন এতিম সামরিক-বেসামরিক বাহিনীসহ সরকারি-বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে উচ্চ পর্যায়ে চাকরীর পাশাপাশি সমাজ সেবা করছেন। এরমাধ্যমে এই প্রতিষ্ঠানটি দু:স্থ এতিমদের আধুনিক পরিবেশে প্রতিপালনে আলোর দ্যুতি ছড়াচ্ছে। 
 আন্তর্জাতিক দাতা সংস্থা কাতার চ্যারিটির পরিচালিত খোবাইব বিন আদি (রা.) উচ্চ বিদ্যালয় ও ইয়াতিম খানা সূত্র জানিয়েছে, ২০০৪ সাল থেকে গঙ্গাচড়ার কচুয়া মৌজায় গড়ে উঠে দু:স্থ ইয়াতিম লালন পালনের এই অত্যাধুনিক প্রতিষ্ঠানটি। ৫ একর জমির ওপর প্রতিষ্ঠিত এই সেন্টারটিতে সুসজ্জিতভাবে স্থাপন করা হয়েছে ৪ তলা বিশিষ্ট একটি একাডেমিক ভবন। ৫০০ জন ধারণক্ষমতা সম্পন্ন একতলা বিশিষ্ট একটি বিশাল হল রুম। আছে আধুনিক ব্যবস্থাপনার আবাসিক, বিশাল খেলার মাঠ, ১৪ টি ক্লাস রুম, দর্জি প্রশিক্ষন কেন্দ্র, কিচেন ও ডাইনিং। আছে আম, লিচু ও পেয়ারা বাগান। ২ একর জমির ওপর বিশাল পুকুরে সব সময় করা হয় মাছের চাষ। আছে একটি নান্দনিক স্থাপনার মসজিদ। 
 অন্যদিকে কয়েকদিন আগে এই ক্যাম্পাসে যোগ হয়েছে আধুনিক স্থাপনা শৈলির এতিম ভবন। ১ কোটি ২০ লাখ টাকা ব্যয়ে চারতলা ভিত্তির এই এতিম ভবনটির ইতোমধ্যেই দুইতলা প্রস্তুত হয়েছে। এরমধ্যে প্রতি তলার আয়তন চার হাজার ৫০০ স্কয়ার ফিট। রয়েছে একটি করে আধুনিক ক্লাস, কম্পিউটার, অফিস ডাইনিং ও কিচেন রুম। এছাড়াও আছে অত্যাধুনিক ৩ টি আবাসিক রুম। চার আসন বিশিষ্ট চারটি ওজুখানা, ১২টি আধুনিক বাথরুম, ১০ টি কম্পিউটার  সম্মৃদ্ধ একটি প্রশিক্ষণ কেন্দ্র। প্রতিষ্ঠানটির পরিচালক হাফেজ হায়দার আলী জানান, সাধারণত সমাজে দু:স্থ ইয়াতিমরা মানবেতর জীবন যাপন করেন। তারা অবহেলার শিকার হয়ে অনেকেই সমাজের মুল স্রোতধারার বাইরে চলে যান। অনেকেই খারাপ পথে পরিচালিত হন। আন্তর্জাতিক দাতা সংস্থা কাতার চ্যারিটি সমাজের দু:স্থ  ইয়াতিমদের একত্রিত করে মানসম্মত জীবন যাপন নিশ্চিত করতেই তাদের আধুনিকভাবে বসবাস এবং শিক্ষার ব্যবস্থা করেছে। 
তিনি আরও জানান, এখন এই প্রতিষ্ঠানটিতে ৪৩৫ জন ইয়াতিম শিশু আধুনিক ব্যবস্থাপনায় লালিত পালিত হচ্ছেন।  বর্তমানে ১১ জন ইয়াতিম ঢাকা, রাজশাহী, চট্রগাম বিশ^বিদ্যালয় এবং হাজি দানেশ কৃষি বিশ^বিদ্যালয়সহ দেশের বিভিন্ন সরকারি বিশ^বিদ্যালয় ও কলেজে অনার্স ও মাস্টার্স পর্যায়ে অধ্যয়ন রত আছে। এছাড়াও বিভিন্ন সরকারি পলিটেকনিকে ৮ জন, ডিপ্লোমা ইন প্যাথলোজিতে ৯ জন এবং ডিপ্লোমা ইন ইঞ্জিনিয়ারিংয়ে ১৩ জন উচ্চ শিক্ষায় অধ্যয়নরত আছে। 
পরিচালক আরও জানান প্রতিষ্ঠার পর থেকে এই ইয়াতিম খানা থেকে মাধ্যমিক পাশ করার পর দেশের বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে পড়ালেখা শেষ কওে ৭০ জন ইয়াতিম, সরকারি বেসরকারি বিভিন্ন কর্মরত আছেন। সেখান থেকে তারা নিজেদের পরিবার পরিজনের ভরনপোষন পরিচালনার পাশাপাশি সমাজসেবা ও দেশের উন্নয়নে কাজ করছেন। 
কাতার চ্যারিটির ঢাকা অফিসের পরিচালক (সোসাল ওয়েলফেয়ার ) ড. আব্দুল কাদের জানান, দু:স্থ্য এতিমরা যেন কোনভাবেই হীনমন্যতায় না ভোগেন। তারা সমাজের অন্য সাধারণ শিশুদের মতো বেড়ে উঠতে পারেন। সেজন্য আমরা কাজ করছি। আমাদের উদ্দেশ্য কোরআন ও  সুন্নাহর আলোকে  দু:স্থ এতিমধ্যে আধুনিক পরিবেশে থাকা খাওয়া ও শিক্ষার ব্যবস্থা এবং তাদের কর্মসংস্থান নিশ্চিত করা। সেলক্ষে রংপুরের গঙ্গাচড়ার খোবাইব সেন্টারটি কাজ করছে।